শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে হামলার ঘটনায় মামলা, জানেন না সাক্ষী

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভফাইল ছবি: প্রথম আলো

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত রোববার সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় আদালতে মো. কামাল পারভেজ নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

শিক্ষার্থীদের দাবি, মামলায় নিরপরাধ ও আন্দোলনে সক্রিয় কয়েকজন শিক্ষার্থীর নামও আছে। তাঁদের নাম যুক্ত করার প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া সাক্ষী হিসেবে নাম দেওয়া হয়েছে এমন এক শিক্ষার্থীর দাবি, সাক্ষী হওয়ার বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি।  

মামলার অভিযোগপত্রে সাক্ষী হিসেবে দুই নম্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক ফয়সাল হোসেনের নাম উল্লেখ হয়েছে। কিন্তু নাম সংযুক্তির বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাকে দ্বিতীয় সাক্ষী করে যে মামলা করা হয়েছে, এ সম্পর্কে আমি জানি না। তা নিয়ে যা করা প্রয়োজন, আইনি প্রক্রিয়ায় তা আমি করব।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী সজীব আহমেদ বলেন, ‘যাঁরা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন, এমন কয়েকজনের নামও আসামি হিসেবে সংযুক্ত করা হয়েছে। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা চাই প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক। নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়। শিক্ষার্থী কয়েকজনের নাম যুক্ত করা হয়েছে, সেগুলো যেন মামলা থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়।’

আমাকে দ্বিতীয় সাক্ষী করে যে মামলা করা হয়েছে, এ সম্পর্কে আমি জানি না। তা নিয়ে যা করা প্রয়োজন, আইনি প্রক্রিয়ায় তা আমি করব।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক ফয়সাল হোসেন

এদিকে মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিআইবি) নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী শাহেদ আহমেদ। আসামি ও সাক্ষীর বিষয়ে আসা অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, এ বিষয়ে আমাকে দু–তিনজন কল দিয়েছেন। আমরা আবার আগামীকাল আলোচনায় বসব। যদি নিরপরাধ কেউ থাকে, তাহলে তাঁর নাম বাদ দিয়ে দেব। পাশাপাশি পিআইবি যখন মামলাটির তদন্ত করবে, তখন নিরপরাধ যাঁরা আছেন, তাঁদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করব। নির্দোষ কোনো শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার হবেন না।’

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খলিলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সজীবুর রহমান এবং অন্য কয়েকজন নেতাসহ ৩১ শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের ৮ জন নেতা-কর্মীসহ মোট ৭৯ জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আসামি আরও ১৫০ থেকে ২০০ জন।

এই মামলা কারা করেছে আমরা জানি না। আমরা ইতিমধ্যে পিবিআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, এটা সমাধানের জন্য কথা বলব। যাঁরা শিক্ষার্থীদের হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলা করেছে, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৯ জুলাই রাত নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের হামলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বাদীর ভাতিজা মারুফ আহমেদসহ অনেকেই মারাত্মকভাবে আহত হন। অনেককে নির্যাতন করা হয়। আসামিরা আহত কয়েকজনকে মৃত ভেবে ঘটনাস্থলে ফেলে রেখে যান। পরবর্তী সময়ে আহত ব্যক্তিদের সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। হামলায় মারুফ আহমেদের একটি চোখ আজীবনের জন্য নষ্ট হয়ে গেছে।

মামলাটি থেকে নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের বাদ দেওয়ার বিষয়ে পিবিআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই মামলা কারা করেছে আমরা জানি না। আমরা ইতিমধ্যে পিবিআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, এটা সমাধানের জন্য কথা বলব। যাঁরা শিক্ষার্থীদের হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলা করেছে, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে মামলার বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন