অবশেষে নীরবতা ভেঙেছেন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়া বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। আজ মঙ্গলবার বিকেলে তিনি বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভায় ঢাকা থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া তাঁর চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দেন।
বরিশালসহ পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ঘোষণা করা হয় গত শনিবার। বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে একক প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে আবারও মনোনয়ন দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। এরপরও সাদিক আবদুল্লাহ মনোনয়ন না পাওয়ায় তাঁর নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়েছেন। বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারাও চুপ ছিলেন গত চার দিন। কেউ কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
মনোনয়ন ঘোষণার পর আবুল খায়ের আবদুল্লাহর পক্ষে তাঁর সমর্থকেরা ওই দিন নগরের বিভিন্ন স্থানে মিছিল বের করলেও দলের পক্ষ থেকে কোনো মিছিল হয়নি। ফলে আসন্ন নির্বাচনে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও তাঁর সমর্থকদের অবস্থান কী হবে—তা নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে জল্পনা ছিল। এর মধ্যে আজ বিকেলে নগরের কালীবাড়ি সড়কের সেরনিয়াবাত ভবনে আয়োজন করা হয় মহানগর আওয়ামী লীগের সভা। এতে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর হোসাইন, সহসভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানসহ নগর আওয়ামী লীগের নেতারা। এ ছাড়া নগরের ৩০টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারাও সভায় অংশ নেন।
সভার একপর্যায়ে বিকেল পৌনে চারটার দিকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন সাদিক আবদুল্লাহ। প্রথমে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন তিনি। পরে তাঁদের উদ্দেশে সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা নমিনেশন (মনোনয়ন) দিয়েছেন আমার চাচাকে। তিনি শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাতের ছেলে। জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা কাজ করব। আমরা এমন কোনো কাজ করবে না, যাতে অন্য কেউ সুযোগ নিতে পারে। যারা লাফালাফি করতেছে, তারা নিজেদের সুবিধার জন্য করতেছে।’
মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত আমাদের সিদ্ধান্ত, এটা এখন ক্লিয়ার। এটাই বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ। অনেকের মনে কষ্ট ছিল, তারপরও আজ প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে এখানে এসেছে। আমরা বিগত দিনে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, এখনো থাকব।’
দলীয় সূত্র জানায়, সাদিক আবদুল্লাহর মনোনয়ন না পাওয়ার খবর তাঁর সমর্থক নেতা-কর্মীদের অবাক করেছে। রাজনীতিতে সক্রিয় না হওয়ায় তাঁর চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ মেয়র পদে মনোনয়ন পেতে পারেন, এটা সাদিকের সমর্থকদের ধারণার বাইরে ছিল।
রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হলেও আবুল খায়ের আবদুল্লাহ এর আগে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে অনেক দিন ধরে নগরে গুঞ্জন ছিল। তিনি বিষয়টি আগেভাগে খোলাসা করেননি। নানা সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ, বন্ধু-শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। এমনকি প্রতি মাসের একটা বড় সময় বরিশালে অবস্থান করছেন। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন বরিশালসহ পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পর তিনি আরও বেশি তৎপর হন। সম্প্রতি তাঁর মা আমেনা বেগমের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দলীয় কর্মসূচির বাইরে তিনি পৃথকভাবে মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন তাঁর ভাড়াবাসায়। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা গুঞ্জন অনেকটা প্রকাশ্যে এসেছিল।
মনোনয়ন ঘোষণার পর আবুল খায়ের আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমি সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। উন্নত আধুনিক নগর গড়তে চাই। নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে চাই। এ জন্য সবার সহযোগিতা চাই।’