‘আম্মু আমার বেশি খারাপ লাগছে’, এরপর আর সাড়া দেননি ছেলে

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ওমর ফারুকছবি: সংগৃহীত

ছোটবেলায় বাবা মারা গেছেন। এসএসসি পরীক্ষায় ফল ভালো না হওয়ায় ঢাকায় চলে যান ওমর ফারুক (২০)। একটি চাকরিও নেন। সেখানে জ্বরে আক্রান্ত হলে বান্দরবানের লামা উপজেলায় মায়ের কাছে ফিরে আসেন। সেই ডেঙ্গু জ্বর শেষ পর্যন্ত মৃত্যু ডেকে এনেছে ওমর ফারুকের।

গত সোমবার ভোরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ওমর ফারুক মারা যান। ওই দিন দুপুরে তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল। এর আগে লামায় স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁর চিকিৎসা চলে। চমেক হাসপাতালে নেওয়ার সময় মায়ের হাত চেপে ধরে ওমর ফারুক বলছিলেন, ‘আম্মু সারা শরীর ব্যথা। আমার বেশি খারাপ লাগছে।’ এরপর আর সাড়া দেননি ফারুক।

মা কমলা বেগমের কাছে ছেলের শেষ কথাটিই স্মৃতি হয়ে রয়েছে। কমলা গতকাল মঙ্গলবার মুঠোফোনে বলেন, ‘ঢাকা থেকে জ্বর নিয়ে ফিরেছে ছেলেটি। আসার সময় চাকরি করে কিছু টাকাও এনেছে। লামার আজিজনগরে ডাক্তার দেখিয়েছি। পরীক্ষায় ডেঙ্গু হয়েছে বলে জানান। এরপর ঘরে স্যালাইন দেওয়া হয়। তার পরও ভালো হচ্ছিল না। রোববার ডাক্তার জানিয়ে দেন হাসপাতালে নিয়ে যেতে।’

ওমর ফারুককে  প্রথমে চকরিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় সোমবার দুপুরে চমেক হাসপাতালে আনা হয়েছে। সেখানে ভোররাতে মারা যান ফারুক।

মা কমলা বেগম বলেন, ‘গাড়িতে উঠে শুধু বলেছে, আম্মু সারা শরীরে ব্যথা। এর পর থেকে আর কোনো সাড়া দেয়নি। আমার ছেলেটিকে আর বাঁচাতে পারলাম না।’

কমলার স্বামী যখন মারা যান, তখন ফারুক খুব ছোট। একাই বড় করে তুলছিলেন ফারুককে। চার বছর আগে কমলা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেই ঘরে তিন বছরের একটি ছেলে রয়েছে। ফারুকও এই সংসারে থাকতেন। এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে তিনি ঢাকায় চাকরিতে চলে যান বলে কমলা জানান।

সোমবার ওমর ফারুকের লাশ লামা আজিজনগর দাফন করা হয়। তাঁর মামা সোবাহান বলেন, ছেলেটাকে অনেক কষ্ট করে মানুষ করছিলেন কমলা। যখন আয়–রোজগারের সময় এল, তখন ছেলেটি চলে গেল। কমলা ছেলের জন্য সারাক্ষণ কান্নাকাটি করছে। এত বড় ছেলের মৃত্যু কীভাবে মেনে নেবেন মা।

চট্টগ্রামে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৫ জন, নারী ২০ জন; বাকি ৪ জন শিশু। এ বছর আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ৬৮৯ জন। সব৴শেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৫ জন। চলতি মাসে সবচেয়ে বেশি—১৪ জন মারা যান। এ মাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৭৫৪ জন।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত বছর মারা গিয়েছিলেন ১০৭ জন। একই সময়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪ হাজারের বেশি মানুষ।