ঢাকঢোল পিটিয়েও মৌলভীবাজারে বিপন্ন বাগাড় মাছ বিক্রি থামছে না
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকা অনুযায়ী, বাগাড় মহাবিপন্ন প্রাণী। বন্য প্রাণী আইনে বাগাড় মাছ ধরা, শিকার ও বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। আইনের বিষয়ে স্থানীয় লোকজনকে সচেতন করতে ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ। বাগাড় বিক্রি বন্ধে অভিযানও চালিয়েছে; কিন্তু মৌলভীবাজারে বিপন্ন এই মাছ শিকার ও বিক্রি বন্ধ হচ্ছে না।
শুধু গ্রামে নয়, শহরের হাটবাজারেও অনেকটা প্রকাশ্যে বাগাড় মাছ বিক্রি করা হচ্ছে। গত রোববার মৌলভীবাজার শহরে মাইকিং করে প্রায় ১১৫ কেজি ওজনের একটি বাগাড় মাছ কেটে কেজি দরে বিক্রি করা হয়েছে। পরদিন সোমবারও প্রকাশ্যে আরেকটি বাগাড় বিক্রি করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার শহরের কোর্ট এলাকায় ১১৫ কেজি ওজনের বাঘাড় মাছটি বিক্রি করার আগে ‘বিশাল আকারের বাগাড় মাছ বিক্রি হবে’ বলে মাইকে প্রচার করা হয়। মাইকিং শুনে ক্রেতারা কোর্ট এলাকায় ভিড় করেন। মাছটি কুশিয়ারা নদীর রানীগঞ্জে জেলেদের জালে ধরা পড়ে। কয়েকজন খুচরা মাছ ব্যবসায়ী এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে মাছটি কিনে মৌলভীবাজারে নিয়ে আসেন। এরপর মাছটি কেটে প্রতি কেজি ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করেন। পরদিন সোমবার একইভাবে আরেকটি বাগাড় কেটে বিক্রি করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শহরে বাগাড় বিক্রি আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়। শহরের পশ্চিম বাজার, সদর উপজেলার শেরপুর মাছের আড়তসহ কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন হাটবাজারে প্রায়ই ছোট-বড় বাগাড় মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে বাগাড় মাছের ছোট ছোট পোনা ডালায় সাজিয়ে বিক্রি করতে দেখা যায়।
স্থানীয় জেলে ও বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাগাড় মিঠাপানির বিপন্ন একটি মাছ। একসময় দেশের নদ-নদী, হাওরে মাছটির সহজলভ্যতা ছিল। মৌলভীবাজারের মনু, ধলাই, কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে অনেক বাগাড় মাছ পাওয়া যেত। স্থানীয় মানুষের কাছে ‘বাঘাইড়, বাঘাড়, বাগাড় বা বাঘ মাছ’ নামে এটি পরিচিত। তবে মাছটি এখন আর আগের মতো পাওয়া যায় না। মাঝেমধ্যে জেলেদের জালে ধরা পড়ে। নির্বিচারে শিকার, নদ-নদী ভরাটসহ মাছের বাস্তুতন্ত্র, প্রতিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মাছটি বিলুপ্তির পথে। প্রকৃতি থেকে মাছটি যাতে একেবারে হারিয়ে না যায়, সে জন্য বন্য প্রাণী (সংরক্ষিত ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২-এর তফসিল-২-এ মাছটিকে সংরক্ষিত করা হয়েছে।
বন্য প্রাণী আইন অনুযায়ী, বাগাড় মাছ ধরা, মারা, কেনাবেচা কিংবা আমদানি-রপ্তানি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছরের কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড বা দুই লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান আছে।
সংরক্ষিত ও বিপন্ন বাগাড় মাছের সুরক্ষায় বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের উদ্যোগে বিভিন্ন সময় মৌলভীবাজার ও সিলেটের হাকালুকি হাওরপারের বিভিন্ন হাটবাজারে ঢোল পিটিয়ে প্রচারণা চালানো হয়েছে। মাছের আড়তদার, খুচরা ব্যবসায়ী, ক্রেতাদের কাছে বাগাড় ধরা, বিক্রি নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ-সংবলিত প্রচারপত্রও বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু মাছটি শিকার ও বিক্রি বন্ধ হয়নি।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, কোর্ট এলাকায় বাগাড় মাছ বিক্রির কথা শুনেছেন। একজন জানানোর পর সোমবার লোক পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু গিয়ে তাঁদের (বিক্রেতা) পাননি। সচেতনতা বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।