ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইনজীবীর কক্ষে সালিসে নাগরিক কমিটির তিন নেতাকে মারধরের অভিযোগ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নারী নির্যাতনের মামলা মীমাংসার সালিসে কথা–কাটাকাটির জেরে জাতীয় নাগরিক কমিটির তিন নেতাকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ রোববার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছেন।
আহত ব্যক্তিরা হলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মো. আতাউল্লাহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সংগঠক জিহান মাহমুদ ও সদর উপজেলার সংগঠক হাসান নাসিমুল ওরফে রাসেল। আহত ব্যক্তিদের অভিযোগ, আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানসহ অন্য আইনজীবীরা কক্ষের বাতি নিভিয়ে পরিকল্পিতভাবে তাঁদের মারধর করেছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেন।
পুলিশ, নাগরিক কমিটি ও আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কুটি লিশিয়ারা গ্রামের রাবেয়া খাতুন নামের এক নারী তিন-চার মাস আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্বামী মো. হাবিবুল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা করেন। রাবেয়া খাতুন সম্পর্কে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মো. আতাউল্লাহর খালা। ওই মামলার তিনটি শুনানির পর আদালত উভয়পক্ষকে নিয়ে বিষয়টি মীমাংসার জন্য দুই পক্ষের আইনজীবীকে নির্দেশ দেন। জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান আদালতে হাবিবুল্লার পক্ষের আইনজীবী। পরে রোববার বিকেল পাঁচটার দিকে মফিজুর রহমানের কক্ষে মীমাংসায় বসার তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
আইনজীবী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বিকেল পাঁচটার দিকে উভয়পক্ষের লোকজন আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে পৌঁছাতে শুরু করেন। তবে রাবেয়া খাতুনের পক্ষের লোকজন কিছুটা বিলম্বে পৌঁছান। বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে মফিজুর রহমানের কক্ষে পৌঁছান আতাউল্লাহ, জিহান মাহমুদ ও হাসান নাসিমুল। বিলম্বে পৌঁছানোর বিষয়টি নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে আতাউল্লাহসহ অন্যদের কথা–কাটাকাটি হয়। সঙ্গে থাকা হাসান নাসিমুল আইনজীবীদের উদ্দেশে আতাউল্লাহকে পরিচয় করিয়ে দেন। এতে আইনজীবীরা রেগে যান। একপর্যায়ে আইনজীবী ও তাঁদের সহকারীরা আতাউল্লাহসহ জাতীয় নাগরিক কমিটির জিহান মাহমুদ ও হাসান নাসিমুলকে মারধর করেন। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এর আগেই আইনজীবীরা ঘটনাস্থল থেকে সরে যান।
মো. আতাউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজনের জামিনের জন্য আদালতে যাই। পরে কসবার এক আত্মীয় পরিচয় করিয়ে দিতে আমাকে ডেকে আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে নিয়ে যান। সরল মনে সেখানে গিয়েছি। আমাদের পরিচয় শুনে তাঁরা মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে বাতি নিভিয়ে ও দরজা বন্ধ করে আমাদের মারধর করেছে। এসপিকে ফোন দিয়ে আমি ফেসবুক লাইভে গিয়েছি।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, মফিজুর রহমান জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক। তিনি ইন্ধন দিয়ে পরিকল্পিতভাবে মারধর করেছেন। নাসিমুলের মাথায় ছয়টি সেলাই লেগেছে।
হাসান নাসিমুল বলেন, ‘আতাউল্লাহ ভাইয়ের আত্মীয়ের পক্ষে আমরা গিয়েছিলাম। বিষয়টি নিয়ে কথা বলার আগে আতাউল্লাহ ভাই নিজের পরিচয়পর্ব শুরু করেন। এর পরপরই আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য আইনজীবীরা উত্তেজিত আচরণ শুরু করেন। কথা–কাটাকাটির সময় তাঁরা মারধর শুরু করেন।’
এ বিষয়ে একাধিকবার চেষ্টা করেও মুঠোফোন না ধরায় মফিজুর রহমান ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সদর থানার ওসি মো. মোজাফফর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা আইনজীবী সমিতির ভবনে পৌঁছে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাবেয়া খাতুন ও তার স্বামী হাবিবুল্লাহ’র যৌতুকসংক্রান্ত পারিবারিক বিষয়টি মীমাংসার জন্য জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনে দুই পক্ষের আইনজীবীরা বসেন। খালার কথায় হয়তো আতাউল্লাহ সালিস সভায় পৌঁছান। এটি নেহায়েত একটি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক মামলা। পরিষ্কার করে বলছি, এখানে দলাদলির বা কোনো রাজনৈতিক বিষয় নেই। দুই পক্ষের মধ্যে কথা–কাটাকাটি ও মারামারি হয়। আতাউল্লাহসহ জাতীয় নাগরিক কমিটির তিনজন আহত হন। আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছে দ্রুত তাঁদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছি। তাঁরা অভিযোগ দিলে আমরা আমলে নেব।’