টেকনাফে আরও নয়জনকে অপহরণ
কক্সবাজারের টেকনাফে আরও নয়জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার সকালে অস্ত্রের মুখে দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা থামিয়ে আটজনকে অপহরণ করা হয়। এ ছাড়া গতকাল সোমবার রাতে নিজ দোকান থেকে অপহরণ করা হয়েছে এক দোকানিকে।
এর আগে গতকাল সকালে বন বিভাগের হয়ে পাহাড়ে গাছের চারা রোপণের সময় ১৯ শ্রমিককে অপহরণ করা হয়েছিল। এ নিয়ে গত দুই দিনে টেকনাফে ২৮ জন অপহরণ হলেন। অপহৃতদের উদ্ধারে টেকনাফের গহিন পাহাড়ে যৌথ বাহিনীর অভিযান চালানোর জন্য জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছে পুলিশ।
টেকনাফের শামলাপুরে অটোরিকশা পরিবহনের লাইনম্যান মো. আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল আটটার দিকে হোয়াইক্যং-বাহারছড়ার শামলাপুর সড়কে অস্ত্রের মুখে দুটি অটোরিকশা থামায় অপহরণকারীরা। এরপর দুটি অটোরিকশার চালকসহ আটজনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় তারা। খবর পেয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। অপহৃতদের নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক শোভন কুমার সাহা বলেন, অপহরণের ঘটনা শুনে ঘটনাস্থলে অভিযান চালানো হয়। এ সময় সিএনজিচালিত অটোরিকশা দুটি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে কতজনকে অপহরণ করা হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত কোনো তথ্য পাননি।
গতকাল সোমবার রাত ১১টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের বড় ডেইল এলাকার বাসিন্দা নাজিম উদ্দিনের ছেলে জসিম উদ্দিনকে অপহরণ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ১৫-২০টি ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে দক্ষিণ বড় ডেইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রাস্তার মাথা এলাকায় অবস্থিত নিজ দোকান থেকে জসিম উদ্দিনকে অপহরণ করে। তাঁকে গহিন পাহাড়ের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এর আগে সোমবার সকালে বন বিভাগের হয়ে পাহাড়ে গাছের চারা রোপণ করতে যাওয়া ১৯ জনকে অপহরণ করা হয়। তাঁদের মুক্তির জন্য অপহরণকারীরা ১৯ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে। অপহৃতদের উদ্ধারে স্থানীয় জনতা ও বন বিভাগের সহায়তায় পাহাড়ে পুলিশ, র্যাব, এপিবিএনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বন বিভাগের টেকনাফের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুর রশিদ অপহরণের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমোরা পাহাড়ে বন বিভাগের জমিতে গাছের চারা রোপণ করতে গিয়েছিলেন ওই ১৯ শ্রমিক। অপহরণের পর তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ফোন করে অপহরণকারীরা মুক্তিপণ দাবি করেছে। এ বিষয়ে টেকনাফ থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
সোমবার সকালে অপহৃতদের একজন সাইফুল ইসলাম। তাঁর বাবা জুহুর আলম বলেন, ‘আমার স্ত্রীর নম্বরে অপহরণকারীরা মুক্তিপণ চেয়ে ফোন দিয়েছে। আমার ছেলেকে মারধর ও নির্যাতন করা হচ্ছে। মুক্তিপণ আদায় না করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা নিলে ছেলের লাশ পাঠানো হবে বলেও হুমকি দেয় অপহরণকারীরা।’ আনসার উল্লাহ ও আয়াত উল্লাহ নামে অপহৃত দুই শ্রমিকের মা খতিজা বেগম বলেন, তাঁকেও অপহরণকারীরা ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করেছে।
টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, পাহাড়ে থাকা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য একের পর এক অপহরণের ঘটনা ঘটাচ্ছে। মুক্তিপণ না দিলে অপহৃতদের নানা ধরনের নির্যাতন করা হয়। এলাকার লোকজন সব সময় অপহরণ আতঙ্কে থাকেন।
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন ও টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, অপহৃতদের উদ্ধারে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চলছে।
কক্সবাজারের জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, ‘গহিন পাহাড়ে এই অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এককভাবে পুলিশের সেখানে অভিযান চালানোর মতো সরঞ্জাম নেই। তাই আমরা যৌথ অভিযান চালানোর জন্য জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছি। আশা করছি, খুব দ্রুত আমরা একটি সফল অভিযান চালাতে পারব।’ কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, অপহৃতদের উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।
এক বছরের বেশি সময়ে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৫৩ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। তাঁদের মধ্যে ৯৪ জন স্থানীয় বাসিন্দা ও ৫৯ জন রোহিঙ্গা নাগরিক। অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৭৮ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে।