কক্সবাজারে জলবায়ু উদ্বাস্তু ২৪৪ পরিবার পেল নতুন পোশাক ও খাদ্যসামগ্রী

কক্সবাজারে প্রথম আলো বন্ধুসভার উদ্যোগে ঈদের নতুন পোশাক ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। আজ দুপুরেছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার পৌরসভার সমুদ্র উপকূলীয় কুতুবদিয়াপাড়ায় জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারের ৫৪ জন শিশুর হাতে ঈদের নতুন পোশাক তুলে দিয়েছে প্রথম আলো বন্ধুসভা। একই সঙ্গে কুতুবদিয়াপাড়া, সমিতিপাড়া, ফদনারডেইল, মোস্তাইক্যাপাড়ার হতদরিদ্র আরও ১৯০ পরিবারে প্রায় আড়াই লাখ টাকার ঈদের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।

এ উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নতুন পোশাক ও খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী।

বন্ধুসভা কক্সবাজার জেলা কমিটির উপদেষ্টা উম্মে সাদিয়া হোসেন সিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আকতার কামাল, প্রথম আলো কক্সবাজারের নিজস্ব প্রতিবেদক আব্দুল কুদ্দুস, বন্ধুসভার সহসভাপতি মো. নুরুল আবছার প্রমুখ। সঞ্চালনায় ছিলেন বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক উলফাতুল মোস্তফা।

প্রতিটি প্যাকেটে ছিল ৫ কেজি চাল, ১ লিটার ভোজ্যতেল, ৪ প্যাকেট নুডলস, ৪ প্যাকেট লাচ্ছা সেমাই, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি ছোলা, ১ কেজি পেঁয়াজ, ১ কেজি চিনি, আধা কেজি লবণ, ৫০ গ্রাম কিশমিশ ও ৭৫ গ্রাম দুধ। এসব খাদ্যসামগ্রী বন্ধুসভাকে সরবরাহ করে জেলা প্রশাসন।

খাদ্যসামগ্রী হাতে পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা নাজের আহমদ। পশ্চিম কুতুবদিয়াপাড়াতে মেয়ের ঘরের থাকেন তিনি। আগে শুঁটকি মহালে কাজ করতেন। এখন কাজ করার মতো শক্তি নেই।

নাজের আহমদের পৈতৃক বাড়ি সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবরডেইল ইউনিয়নের খুদিয়ারটেক এলাকাতে। একানব্বইয়ের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে তাঁর মা-বাবা, স্ত্রী, ২ ছেলে ২ মেয়েকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এরপর চার ছেলে নিয়ে তিনি কুতুবদিয়া থেকে কক্সবাজার শহরের কুতুবদিয়াপাড়ায় সরকারি খাসজমিতে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেন।

নাজের আহমদ বলেন, রোজার মাসে খুব কষ্টে দিন কাটছিল। ঈদ নিয়ে চিন্তায় ছিলাম, প্রথম আলোর খাদ্যসহায়তা পেয়ে চিন্তা দূর হলো।

ঈদের নতুন জামা পেয়ে মহাখুশি কুতুবদিয়া পাড়ার রবিউল হাসান (১২)। তার বাবা আবুল সেলিম মাছ ধরার ট্রলারের জেলে। কয়েক মাস ধরে বেকার। মা শুঁটকি মহালে কাজ করে যা আয় করেন, তা দিয়ে সংসার চলে না। রবিউল বলে, ‘বাবা বলেছিল এবারের ঈদে নতুন জামা কিনে দিতে পারবেন না। তাই মন খারাপ ছিল। এখন আমি খুব খুশি। নতুন জামা পরে বন্ধুদের সঙ্গে শহরে ঘুরতে পারব।’

একই কথা জানায় সমিতিপাড়ার মেয়ে তামান্না মুনি (১১)। সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে তার বাবা নিখোঁজ হন। মা শুঁটকি মহালে কাজ করলেও মাসখানেক ধরে বেকার।

ইউএনও নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী বলেন, বন্ধুসভার সদস্যরা লেখাপড়ার পাশাপাশি সব সময় ভালো কাজের সঙ্গে থাকেন। আজকের কাজটি অনন্য এবং প্রশংসনীয় হয়েছে। উপযুক্ত মানুষের হাতে খাদ্যসহায়তা ও নতুন জামা তুলে দিতে পেরে তিনিও খুশি হয়েছেন।

পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আকতার কামাল সবদিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোকে মনে রাখার জন্য তিনি বন্ধুসভার সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বন্ধুসভার সহসভাপতি আবদুল নবী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন, অর্থ সম্পাদক উগগ্যা মারমা, বন্ধুসভার কক্সবাজার সরকারি কলেজ সভাপতি সুরাজ দত্ত, সাধারণ সম্পাদক আয়েশা নূরী, কক্সবাজার সিটি কলেজ বন্ধুসভা সভাপতি সাইফুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক রুয়াজ উদ্দিন প্রমুখ।