হাসপাতালে ভর্তির ৪৮ দিন পর বৃদ্ধের মৃত্যু, খোঁজ নেয়নি কেউ

লাশ
প্রতীকী ছবি

চলতি বছরের ৫ আগস্ট কিশোরগঞ্জের ভৈরবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আহত অবস্থায় সফিকুল ইসলাম (৬২) নামের এক ব্যক্তি ভর্তি হন। এ সময় পরিবারের কেউ একটি দিনের জন্যও খোঁজ নিতে হাসপাতালে আসেনি।

টানা ৪৮ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর আজ সোমবার সকালে সফিকুল মারা যান। পরে পুলিশ তাঁর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

সফিকুল ভৈরবের পৌর শহরের কালীপুর হাজী মোতালিব মিয়া বাড়ির আবদুল জব্বার মিয়ার ছেলে। তিনি প্রায় তিন যুগ ধরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বসাবাস করতেন।

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শরীরে আঘাতের চিহ্ন নিয়ে সফিকুল ৫ আগস্ট ভৈরবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। দিন দিন অবস্থার অবনতি হয় তাঁর। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় পায়ে পচন ধরে। উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও পরিবারের কেউ না আসায় হাসপাতালে রেখেই চিকিৎসা চলমান রাখে কর্তৃপক্ষ। আজ মারা যাওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুরো বিষয়টি পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।

এ বিষয়ে কথা হয় মারা যাওয়া সফিকুলের ভাই আক্তার মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার ভাই ৩৫ বছর ধরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে পরিবারের সঙ্গে থাকেন। তাঁর দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে বাড়িতে খুব বেশি আসেননি। ৫ আগস্ট আহত অবস্থায় বাড়িতে আসেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরও সন্তানেরা খোঁজ নেননি। যতটুকু জেনেছি, ভাইকে সন্তানেরা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। এ অবস্থায় আমরা কিছু টাকা সংগ্রহ করে ভাইকে দিয়েছিলাম।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ জানান, প্রথমত শরীরে আঘাতের চিহ্ন নিয়ে সফিকুল হাসপাতালে ভর্তি হন। এ ছাড়া তিনি কয়েকটি জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন। বিশেষ করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না। তাঁর স্বজনদের সন্ধান করার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু কাউকে পাওয়া যায়নি। একটি দিনের জন্য আপনজনেরা খোঁজ নেননি। কেউ সাহায্য করতে পারেন, সফিকুলও এমন কারও নাম বলতে পারেননি।

ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসমত উল্লাহ বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ঘটনা জানার পর সফিকুলের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।