আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর আগেই ভোট চাইতে মসজিদে প্রার্থীরা 

জুমার নামাজ আদায় করে মুসল্লিদের কাছে ভোট চাইলেন জাহাঙ্গীর আলম ও আজমত উল্লা খান। বাকিরাও ছিলেন মাঠে।

জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিদের সঙ্গে কথা বলছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খান। গতকাল দুপুরে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে
ছবি: আল-আমিন

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পরদিনই গতকাল শুক্রবার বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে গিয়ে মুসল্লিদের কাছে দোয়া-ভোট চেয়েছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খান ও দলটির ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ জাহাঙ্গীর আলমসহ বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের কেউ কেউ মসজিদে খুতবা শুরুর আগে বক্তব্যও দিয়েছেন।

যদিও এখনো মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হয়নি। প্রতীক বরাদ্দও হয়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার-প্রচারণা চালানোরও সময় শুরু হয়নি। কিন্তু তবু বসে নেই মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা। 

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার তথ্যমতে, মেয়র পদে ১২ জন, সংরক্ষিত ১৯ ওয়ার্ডে ৮২ জন ও ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ২৯০ জন প্রার্থী। 

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হয়েছেন সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। পাশাপাশি মেয়র পদে তাঁর মায়ের জন্যও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এই নেতা। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন গাজীপুর নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান। আর বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকারের ভাতিজা সরকার শাহ নূর ইসলাম মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির নেতা এম এম নিয়াজ উদ্দিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম ও জাকের পার্টির হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন রাজু আহমেদ। বাকিরা সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী। 

নগরের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের জান্নাতুল মাওয়া জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন জাহাঙ্গীর আলম। নামাজের খুতবা শুরুর আগে মুসল্লিদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আপনারা নগরবাসী আমাকে ভোট দিয়ে মেয়র করেছিলেন। আমি আপনাদের জন্য নগরের রাস্তাঘাট করেছি। সেসব রাস্তা আপনারা ব্যবহার করছেন। কিন্তু কিছু মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে আমাকে মেয়র থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার মা বলেছেন, “আমার ওপর অন্যায় হয়েছে।” তাই আমি ও আমার মা প্রার্থী হয়েছি। আমাকে হয়রানি করা হতে পারে। আমি হারিয়ে যেতে পারি, কিন্তু আপনারা আমার মায়ের দিকটা দেখবেন। কোনো ভণ্ড, প্রতারক, দখলবাজ যেন এই শহরটাকে ধ্বংস করতে না পারে।’

এদিকে চান্দনা চৌরাস্তার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন আজমত উল্লা খান। এ সময় মসজিদের মাইকে মুসল্লিদের কাছে দোয়া ও নৌকা প্রতীকে ভোট চান তিনি। বলেন, ‘দীর্ঘ ১৮ বছর আমি পৌরসভার মেয়র ছিলাম। এই দীর্ঘ সময়ে ১৮ টাকারও দুর্নীতির অভিযোগ নেই আমার বিরুদ্ধে। এই গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত করা সময়ের দাবি। তাই ২৫ মে ভোটে আমি নির্বাচিত হলে এই শহরটাকে মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত করে গড়ে তুলব। আমি আপনাদের দোয়া চাই। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন।’

একইভাবে বিএনপি নেতা হাসান উদ্দিন সরকারের ভাতিজা সরকার শাহ নূর ইসলাম টঙ্গীর মুদাফা এলাকার একটি মসজিদে নামাজ পড়েন। এ সময় মুসল্লিদের কাছে তিনি দোয়া চান এবং নির্বাচনে ‘তাঁর দিকটা দেখার’ আহ্বান জানান। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেয়র পদে অন্য প্রার্থীরাও নিজ নিজ এলাকার মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন। এ সময় তাঁরাও মুসল্লিদের কাছ থেকে দোয়া ও ভোট কামনা করেন। তবে শুধু মেয়র প্রার্থীই নন, ৫৭টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরাও নিজ নিজ এলাকার মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন। এ সময় মুসল্লিদের সঙ্গে দেখা করা, কুশল বিনিময়সহ দোয়া ও ভোট কামনা করেন। 

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোট গ্রহণ হবে আগামী ২৫ মে। গত বৃহস্পতিবার ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ৩০ এপ্রিল। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৮ মে। প্রতীক বরাদ্দ হবে ৯ মে।