নগরকান্দায় বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের দোকান দখলের অভিযোগ

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক মো. খায়রুজ্জামান মোল্লার বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের তিনটি দোকান দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৬ আগস্ট রাতে উপজেলার তামলা ইউনিয়নের রসুলপুর বাজারের তিনটি দোকান দখলে নেন তিনি।

দোকান দখলমুক্ত করতে ১৩ সেপ্টেম্বর নগরকান্দা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী তিন ব্যবসায়ী। তাঁরা হলেন তালমা ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা রঞ্জিত বিশ্বাস, বিলনালিয়া গ্রামের আবদুল হালিম মিয়া ও বিবিরকান্দি গ্রামের মোশারফ হোসেন মাতুব্বর। রসুলপুর বাজারে তাঁদের তিনটি আধা পাকা দোকান আছে।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে রসুলপুর বাজারের খালপাড়ে সরকারি জমির ইজারা নিয়ে দোকানঘর বানিয়ে তাঁরা পেঁয়াজ ও পাটের ব্যবসা করে আসছেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট বিকেলে বিএনপির নেতা খায়রুজ্জামান মোল্লা দোকানের সামনে এসে তাঁদের দোকান থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। তাঁরা রাজি না হলে তিনি গালাগালি করে চলে যান। পরে তাঁরা দোকান বন্ধ করে বাড়িতে গেলে খায়রুজ্জামান এসে পাশাপাশি থাকা তিনটি দোকানে তালা মারেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে কয়েক দফা মীমাংসা করে দিলেও তালা খুলে দেননি খায়রুজ্জামান। এতে দোকানে থাকা বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ নষ্ট হতে শুরু করে। পরে ১৩ সেপ্টেম্বর তাঁরা থানায় পৃথকভাবে তিনটি লিখিত অভিযোগ দেন।

ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন মাতুব্বর প্রথম আলোকে বলেন, থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত ওই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর ওই নেতা নানাভাবে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। তাঁরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

দখল করা দোকানগুলো নিজেদের বলে দাবি করেন বিএনপির নেতা খায়রুজ্জামান মোল্লা। তিনি বলেন, ‘ওই জায়গায় আমার বাবা প্রয়াত মকবুল হোসেনের দোকান ছিল। তিনি (মকবুল) উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ও রসুলপুর বাজার কমিটির সভাপতি ছিলেন। দোকানগুলো আওয়ামী লীগ নেত্রী সাজেদা চৌধুরীর বাড়ির মুখোমুখি হওয়ায় ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর উচ্ছেদ করা হয়। এই শোকে ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যে আমার বাবা মারা যান।’

খায়রুজ্জামান বলেন, ‘যাঁরা ব্যবসা করছেন, তাঁদের দোকানঘর আমি সরিয়ে নিতে বলেছি। প্রয়োজনে ক্ষতিপূরণ দিতেও রাজি আছি। ওই ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, তাঁরা সরকারের কাছ থেকে নাকি ইজারা নিয়েছেন। যদি তাঁরা ইজারার কাগজ দেখাতে পারেন, তাহলে আমি স্বেচ্ছায় দোকান ছেড়ে দেব। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আমাদের তিনটি দোকান দখল করে নেন ওই ব্যবসায়ীরা। সরকারের পতনের পর আমরা জায়গা পুনরুদ্ধার করতে দোকানে তালা দিয়েছি।’

নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ সফর আলী বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষকে ডেকেছিল। তবে জমির সঠিক কাগজপত্র কেউ দেখাতে পারেননি। এ জন্য বাদী ও বিবাদীকে আদালতের মাধ্যমে ঘটনাটি মীমাংসা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জায়গা–জমির বিষয়ে পুলিশের তেমন কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই।

জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মো. হাবিবুর রহমান বলেন, দখলদার ও চাঁদাবাজ নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে তাঁদের নেতা তারেক রহমান ও বিএনপির নেত্রী শামা ওবায়েদ। বিএনপির কোনো নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি কিংবা কারও দোকান দখলের অভিযোগ পেলে অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিএনপির নেতা খায়রুজ্জামানের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেলে তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।