হামলায় নিহত ওসি রাজ্জাকের বাড়িতে মাতম, বিচার চান স্বজনেরা

নিহত আবদুর রাজ্জাকের স্বজনদের আহাজারি। আজ সোমবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার শালিমডোলপাড়ায়ছবি: প্রথম আলো

‘ভাইয়ের বদলি হয়েছিল টাঙ্গাইল জেলায়। এর আগে ছুটিতে বাড়ি আসার কথা ছিল। কিন্তু এখন সে আসবে লাশ হয়ে। থানায় হামলা করে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এর বিচার চাই। আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়।’ কথাগুলো বলছিলেন হামলায় নিহত পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাকের ছোট বোন মাউনজেরা আলিফ।

গতকাল রোববার সন্ত্রাসী হামলায় সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার ১৩ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক (৪৫)। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের শালিমডোলপাড়ার মৃত মাহতাব মণ্ডলের ছেলে। আট ভাইবোনের পরিবারের মধ্যে আবদুর রাজ্জাক ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁর নিহত হওয়ার খবর শোনার পর বাড়িতে চলছে মাতম।

আবদুর রাজ্জাক
ছবি: সংগৃহীত

আজ সোমবার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, নিহত আবদুর রাজ্জাকের বাড়িভর্তি আত্মীয়স্বজন। ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদ শুনে গতকাল রাতে ঢাকা থেকে ব্যক্তিগত প্রাইভেট কারে রওনা হন মাউনজেরা আলিফ। আজ সকালে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছান। তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদে কাজ করেন। মাউনজেরা আলিফ বলেন, ভাইয়ের (আবদুর রাজ্জাক) আগে বিয়ে হয়েছিল। পরে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ হয়; কোনো সন্তান নেই। তিনি পরিবারের সবার খেয়াল রাখতেন; সবাইকে ভালোবাসতেন। সবার কাছেই তিনি ছিলেন প্রিয়। তাঁর নৃশংস হত্যার ঘটনায় সবাই শোকাতুর হয়ে আছেন।

আবদুর রাজ্জাকের মৃত্যুর খবরে এলাকার অনেক মানুষই এসেছেন তাঁর বাড়িতে। বৃদ্ধ মা রিজিয়া বেগম বড় ছেলেকে হারিয়ে শোকে পাথর, ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছেন। ভাইকে হারিয়ে বোন মাউনজেরা আলিফসহ অন্য স্বজনদের কান্নায় ভারী পরিবেশ।

নিহত আবদুর রাজ্জাকের লাশ সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে রয়েছে। সেখানে লাশ দেখতে গিয়েছিলেন তাঁর ভাই রেজাউল করিম। সেখান থেকে আজ দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বাড়িতে ফিরে আসেন রেজাউল করিম। তাঁর কাছে লাশের বর্ণনা শুনে ভাইবোনসহ আত্মীয়স্বজনের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে। রেজাউল করিম মুঠোফোনে লাশের ছবি দেখান সবাইকে। সেই ছবি দেখে সবাই আবারও কান্নায় ভেঙে পড়েন।

রেজাউল করিম জানান, ভাইয়ের লাশ (আবদুর রাজ্জাক) সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে রয়েছে। সেখানে তাঁর আরেক ভাই রয়েছেন। সেখানে লাশের ময়নাতদন্তের পর লাশ হস্তান্তর করা হবে। মরদেহ বাড়িতে আসার পর দাফনের সময় নির্ধারণ করা হবে।