‘মুক্তিপণ না পেয়ে’ শিশুর লাশ এনে ফেলে রাখা হয় বাড়ির পাশে

সাব্বির মিয়া
ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় মুক্তিপণ না পেয়ে সাব্বির মিয়া (৯) নামের এক শিশুকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিবার। নিহত সাব্বির উপজেলার বুধল ইউনিয়নের পূর্ব খাঁটিহাতা গ্রামের শরাফত আলীর ছেলে।

এ ঘটনায় গতকাল শনিবার রাতে দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। শরাফত আলীও সদর থানায় একটি মামলা করেছেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিশু সাব্বির বাড়ি থেকে বের হয়। যাওয়ার সময় মা খালেদা বেগমকে (৩০) বলে যায়, সে পাঁচ টাকা নিয়ে বাড়ির পাশের দোকানে যাচ্ছে। ওই দোকানে যাওয়ার পর শিশুটি আর বাড়ি ফেরেনি। সারা রাত মা-বাবা ও পরিবারের লোকজন নানা জায়গায় খুঁজেও শিশুটির কোনো সন্ধান পাননি। গত বুধবার সকাল ছয়টার দিকে বাড়ির প্রবেশপথে একটি চিরকুট পান শিশুটির মা। চিরকুটে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছিল। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে শিশুটিকে মেরে ফেলার হুমকিও ছিল। চিরকুটে টাকা পাঠানোর জন্য একটি মুঠোফোন নম্বর দেওয়া হয়।

বুধবার সকাল থেকে গত শুক্রবার রাত পর্যন্ত ওই মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করেছে শিশু সাব্বিরের পরিবারের লোকজন। তাঁরা টাকা দিতেও রাজি হয়েছেন। তবে শর্ত ছিল মুঠোফোনে শিশুটির সঙ্গে পরিবারের লোকজনের যোগাযোগ করিয়ে দিতে হবে। ঘটনাটি বুধবার রাতেই পরিবারের লোকজন সদর থানার পুলিশকে জানান। মুঠোফোন নম্বরের সূত্র ধরে পুলিশ গত বৃহস্পতিবার থেকে অভিযানে নামে। একাধিক জায়গায় অভিযান চালানোর পর অপহরণকারী ব্যক্তিরা শুক্রবার রাতে ওই শিশুর লাশ বাড়ির কাছের নির্জন একটি পুকুরের কাঁদাজলের মধ্যে ফেলে রাখে। গতকাল দুপুরে গ্রামের একদল শিশু-কিশোর ওই লাশ দেখতে পায়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতেই শিশুর লাশ দাফন করে পরিবার।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শরাফত আলী-খালেদা বেগম দম্পতির তিন ছেলে আর এক মেয়ের মধ্যে সাব্বির ছিল দ্বিতীয়। শরাফত আলী নির্মাণশ্রমিকের কাজ করেন। ছোট একটা জমির মধ্যে টিনের দুটি ঘরে তাঁদের বসবাস। সাব্বির গ্রামের একটি বেসরকারি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত।

সাব্বিরের মা খালেদা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। এত ট্যাহা দিমু কীভাবে? ট্যাহার জন্য আমার মানিকটারে মাইরা ফালাইছে। আমি এর বিচার চাই।’

এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মহিউদ্দিন। আর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেছেন, শিশুটির লাশ গতকাল দুপুরে উদ্ধার করা হলেও মূলত শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে এর অনেক আগে। এ জন্য লাশে পচন ধরে গিয়েছিল। শিশুটিকে ঠিক কীভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা বোঝা যাচ্ছিল না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা বোঝা যাবে। শিশু হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান ওসি।