বন্যার পর ফসলের খেতে কাটুই পোকা, সামনে যা পড়ছে খেয়ে ফেলছে

ফেনীর সোনাগাজীর বিভিন্ন এলাকায় ফসল বিনাশকারী কাটুই পোকার উপদ্রব দেখা দিয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়ন থেকে তোলাছবি-প্রথম আলো

সম্প্রতি বন্যার পর ফেনীর সোনাগাজীতে কৃষকদের নতুন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কাটুই পোকার (ফল আর্মি ওয়ার্ম) আক্রমণ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমি, জলাশয় ও বাসাবাড়িতে এ পোকার অস্বাভাবিক উপদ্রব দেখা দিয়েছে। কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকদের ধারণা, বন্যা ও বন্যাপরবর্তীকালে বিভিন্ন সংগঠন ও কোম্পানি থেকে সহায়তার জন্য সরবরাহ করা চারার সঙ্গে এ পোকার আগমন ঘটে থাকতে পারে।

উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের আহাম্মদপুর এলাকার কৃষক সিরাজুল হক বলেন, এ বছর বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। সে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ধানের পাশাপাশি ৮ শতক জমিতে পাট শাক বুনেছিলেন। হঠাৎ করে আর্মি ওয়ার্ম পোকা সব শাক খেয়ে ফেলেছে। এই পোকা আগে কখনো দেখেননি। কীটনাশক ছিটিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না।

গত রোববার সরেজমিনে উপজেলার আমিরাবাদ ও নবাবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফসলের মাঠ, বাড়িঘর, রাস্তাঘাট এবং আশপাশের বনজঙ্গলে কালো বর্ণের অসংখ্য পোকা বিচরণ করছে। কৃষি কর্মকর্তাদের মতে এই পোকা পানিতে থাকতে পারে না। তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, পুকুর, ডোবা-নালাসহ আমন ধানের মাঠে পানি থাকলেও পোকাগুলো নির্বিঘ্নে পানির ওপর দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে। চর কৃষ্ণজয়, চর লামছি, চর ডুব্বা, আহাম্মদপুর, মজুপুর, মহদিয়া, সুলতানপুর, মোবারক ঘোনা, ফতেহপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কৃষকের চাষ করা পাট শাক, কলমি শাক, শিম, কুমড়া, লাউ, ঝিঙে, বেগুনসহ বিভিন্ন ফসলের গাছের পাতা ও কাণ্ডে কালো বর্ণের এই পোকা ছেয়ে আছে। পোকার আক্রমণে ধানসহ অন্যান্য উদ্ভিদের পাতা শুকিয়ে বাদামি হয়ে পড়ছে।

চর কৃষ্ণজয় এলাকার কৃষক আবুল কালাম বলেন, ‘আমি ৫৫ বছর ধরে কৃষিকাজ ও সবজি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছি। আমার জীবনে এ ধরনের পোকা কখনো দেখিনি। পোকাগুলো আমাদের বাড়িঘরে ঢুকে পড়ছে। বাড়ির পাশে ৮০ শতক জমিতে ধান লাগিয়েছি। এখন পোকার আক্রমণ দেখে ভয়ে আছি।’

মো. মোস্তফা নামের আরেক কৃষক বলেন, বন্যায় তাঁর ৬০ শতক জমির ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিভিন্নজনের সহায়তায় একই জমিতে কয়েক দফা চাষ দিয়ে আগাম জাতের শাকসবজি লাগিয়েছেন। এখন সেগুলোও পোকায় খেয়ে ফেলছে।

ফেনীর সোনাগাজীর বিভিন্ন এলাকায় ফসল বিনাশকারী কাটুই পোকার উপদ্রব দেখা দিয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়ন থেকে তোলা
ছবি-প্রথম আলো

কৃষকের ধারণা, বন্যার পানিতে এ পোকা ভেসে এসেছে। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, তারা ফসলের জন্য ক্ষতিকর এ পোকা দমনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদ আলম বলেন, উপজেলায় আর্মি ওয়ার্ম পোকার আক্রমণে এখনো ধানের ক্ষতি হয়নি। তবে শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে। তাঁরা কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে দিন-রাত পালাক্রমে পোকা দমনে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন।

জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের পোকা দমনে মূলত তিন ধরনের ওষুধ ছিটানো হয়। নাইট্রো ও কোরাজেন মিশিয়ে স্প্রে করলে পোকার উপদ্রব কমে যায়। এ ছাড়া ১৬ লিটার কনটেইনারে ৩০ মিলিলিটার মেট্রো ও ১৫ মিলি কোরোজেনের মিশ্রণ ব্যবহার করা যেতে পারে। বন্যাপরবর্তী সময়ে উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক কোম্পানি ও সংগঠন কৃষকদের আমন ধানসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির চারা দিয়ে সহায়তা করেছিল।

ওই সব চারার সঙ্গে হয়তো কিছু কীটের লার্ভা ফসলের মাঠে চলে আসতে পারে। আর্মি ওয়ার্ম পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় কীটনাশক প্রয়োগের পাশাপাশি কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন। এ ছাড়া পোকা দমনে আলোর ফাঁদসহ নানা ধরনের কর্মসূচি হাতে নিয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে বেশ কয়েকটি দল গঠন করে কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরা।