২ দিন বন্ধ থাকার পর নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে আবার গোলাগুলি, এপারে আতঙ্ক
দুই দিন বন্ধ থাকার পর আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে আবার গোলাগুলি শুরু হয়েছে। থেমে থেমে ছোড়া হচ্ছে আর্টিলারি ও মর্টার শেল। তবে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আকাশে ফাইটার জেট ও হেলিকপ্টারের ওড়াউড়ি দেখা যায়নি।
পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, গত শনিবার পর্যন্ত টানা ২৩ দিন রাখাইন রাজ্যের স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে তুমুল লড়াই চলছিল। এ সময় আরকান আর্মির লক্ষ্যবস্তুতে ফাইটার জেট ও হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণ, মর্টার শেল ও বোমা নিক্ষেপ করে আসছিল মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী। কিন্তু গত রোববার সকাল থেকে হঠাৎ গোলাগুলি থেমে যায়। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গত দুই দিন সীমান্তের ওপার থেকে গোলাগুলির কোনো শব্দ আসেনি। আকাশেও মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ফাইটার জেট ও হেলিকপ্টার দেখা যায়নি। আজ সকাল থেকে নতুন করে গোলাগুলির শব্দে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত এবং শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
বিজিপির চৌকি থেকে ছোড়া হচ্ছে মর্টার শেল
ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু বাজারের কোনারপাড়া এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ওয়ালিডং ও খ্য মং সেক পাহাড়ে মধ্যভাগের জায়গাটুকু নো ম্যানস ল্যান্ড। এখানে (শূন্যরেখায়) আশ্রয়শিবির গড়ে তুলে পাঁচ বছর ধরে বাস করছে রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়িত ৪ হাজার ২০০ জনের বেশি রোহিঙ্গা। আশ্রয়শিবিরের পাশ ঘেঁষেই কাঁটাতারের বেড়া। কাঁটাতারের দক্ষিণে পাহাড়ের সারি। পাহাড়চূড়ায় স্থাপন করা হয়েছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) একাধিক চৌকি। ঘুমধুমের তুমব্রু বাজার থেকে এসব খালি চোখেই দেখা যায়।
শূন্যরেখার আশ্রয়শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল সাতটা থেকে আবার শুরু হয়েছে গোলাগুলি। পাহাড়চূড়ার বিজিপির চৌকি থেকে খ্য মং সেক পাহাড়ের দিকে থেমে থেমে ছোড়া হচ্ছে আর্টিলারি ও মর্টার শেল। বেলা ১১টা পর্যন্ত ২০ থেকে ২৫টি আর্টিলারি ও মর্টার শেল ছোড়া হয়েছে। বিকট শব্দে পাহাড়ে পাদদেশে থাকা শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরের মাটি কাঁপছে। সমানে চলছে গুলিবর্ষণও। এতে আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গারা আতঙ্কে আছেন। রোহিঙ্গাদের মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে গোলা ও বোমা। আশ্রয়শিবিরে মর্টার শেল কিংবা আর্টিলারি এসে পড়লে হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে।
আশ্রয়শিবিরের আরও কয়েক বাসিন্দা জানান, গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সীমান্তে বৃষ্টি হয়েছিল। এ সময়টুকুতে মিয়ানমার ভূখণ্ডের পাহাড়চূড়ার কয়েকটি চৌকিতে নিরাপত্তা বাহিনীর উর্দিপরা সদস্যদের সমাগম ও অস্ত্রশস্ত্র মজুত করতে দেখা গেছে। বিকেলের দিকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরের কাঁটাতারের পাশে এসে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। আজ সকাল নয়টার দিকেও বিজিপির কয়েকটি দল কাঁটাতারের পাশে অবস্থান নিয়েছে। পাঁচ থেকে সাতজনের কয়েকটি দলকে সীমান্তের পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটাচলা করতে দেখা গেছে। বিজিপির কয়েক সদস্যকে কাঁটাতারের পাশে দাঁড়িয়ে শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরের কয়েকটি রোহিঙ্গা শিশুর সঙ্গেও কথা বলতে দেখা গেছে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, দুই দিন চুপ থাকার পর মিয়ানমার সীমান্তে আবার গোলাগুলির শব্দে এপারেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আজ সকাল সাতটার দিকে মিয়ানমারের ওয়ালিডং পাহাড় থেকে বিকট শব্দে মর্টার শেলের আওয়াজ কানে বাজছে। ওয়ালিডং পাহাড়ের পূর্ব পাশে খ্য মং সেক পাহাড়ে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তুমুল লড়াই চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মিয়ানমারের ছোড়া মর্টার শেলের কোনো গোলা বা বোমা বাংলাদেশ ভূখণ্ডে এসে পড়েনি। সীমান্তে কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে আছে।
জাহাঙ্গীর আজিজ আরও বলেন, পাঁচ বছর আগে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড, নিপীড়নের মাধ্যমে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গাকে বিতাড়িত করে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। এখনো রাখাইন রাজ্যে থাকা অন্য রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ ঠেলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে বলে মনে করেন তিনি।
পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান অভিযান এবং বাংলাদেশের ভেতরে দেশটি থেকে ছোড়া মর্টার শেলের গোলা এসে পড়ার ঘটনার সর্বশেষ গত রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয় এবং এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, ‘আমরা আমাদের অবস্থান শক্ত করেছি। আমাদের ভয় হলো অত্যাচারিত লোকগুলো আবারও যদি আমাদের দেশে ঢোকার চেষ্টা করে। আমাদের বর্ডার গার্ড এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে সতর্ক করে দিয়েছি, যাতে কেউ এখানে না আসতে পারে।’