মনোনয়ন পেয়ে এসেই আচরণবিধি ভেঙে ‘শোডাউন’ আ. লীগ প্রার্থীর
দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর আজ সোমবার বিকেলে ঢাকা থেকে এলাকায় ফিরে আচরণবিধি ভেঙে ‘শোডাউন’ করেছেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এস এম আল মামুন। উপজেলার বড় দারোগাহাট এলাকায় তাঁকে ছয় শতাধিক যানবাহন নিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন নেতা-কর্মীরা। সেখানে পথসভাও করেন তাঁরা। পথসভা শেষে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে তিনি গাড়িবহর নিয়েই চট্টগ্রাম নগরের উদ্দেশে রওনা দেন। নগরে পৌঁছানোর আগে একাধিক স্থানে পথসভা করেন তিনি।
মামুনের পক্ষে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের এই ‘শোডাউনের’ কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। এতে যাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দারা ভোগান্তিতে পড়েন।
বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়বকুণ্ড বাজার এলাকায় মহাসড়কে দাঁড়ানো একটি ট্রাকে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন এস এম আল মামুন। মহাসড়কে তাঁকে স্বাগত জানাতে আসা নেতা-কর্মীদের গাড়িবহরও দাঁড়িয়ে রয়েছে। সড়কের পাশে ভিড় করেছেন পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। এ সময় মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী লেনে প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। তবে ঢাকামুখী লেনে স্বাভাবিক ছিল যানবাহন চলাচল।
এস এম আল মামুনকে স্বাগত জানাতে আসা নেতা-কর্মীদের গাড়িবহরে ছিল অর্ধশতাধিক ট্রাক, সাড়ে তিন শতাধিক মোটরসাইকেল এবং দুই শতাধিক ব্যক্তিগত গাড়ি ও মিনিবাস। ট্রাকে থাকা নেতা-কর্মীদের হাতে কাপড় দিয়ে বানানো নৌকা প্রতীক দেখা গেছে। কয়েকটি ট্রাকের সামনে নৌকা প্রতীকের ব্যানার টাঙানো হয়।
গাড়িবহরে ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য আ ম ম দিলশাদ, জ্যেষ্ঠ সাধারণ সম্পাদক ও সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম তাজুল ইসলাম নিজামী, বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্যাহ মিয়াজী, কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, দল মনোনীত প্রার্থী, স্বতন্ত্র প্রার্থী বা তাঁদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি জনগণের চলাচলের বিঘ্ন সৃষ্টি করে এমন কোনো সড়কে পথসভা করতে পারবেন না। তফসিল ঘোষণার দিন থেকে এ ধরনের অপরাধের জন্য ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।
মিছিলে আচরণবিধি না মানার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম নিজামী প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় নেতা-কর্মীরা কোনো গাড়িবহর নিয়ে কোনো শোডাউন করেননি। উৎসুক জনতা এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দলের প্রার্থীকে দেখতে ভিড় করেছেন। এস এম আল মামুন মনোনয়নপত্র নিলেও এখনো জমা না দেওয়ায় নির্বাচনের আচরণবিধির আওতায় পড়েন না বলে দাবি করেন তাজুল ইসলাম নিজামী।
নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের আগে কোনো প্রার্থী সভা–সমাবেশ কিংবা শোডাউন করতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা কিংবা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অনুমতি নিয়েছেন কি না, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তিনি আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন কি না, তা জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সীতাকুণ্ড আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সভা–সমাবেশ কিংবা শোডাউন করার জন্য তাঁর কার্যালয় থেকে অনুমতি নেননি। নির্বাচনে আচরণবিধি প্রতিপালনের জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার নির্বাচনী এলাকাগুলোয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা কাজ শুরু করবেন।
সাংবাদিক আহত
সীতাকুণ্ডে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এস এম আল মামুনের শোডাউনের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে শেখ সালাউদ্দিন নামে স্থানীয় এক সাংবাদিক নেতা-কর্মীদের ধাক্কায় আহত হয়েছেন। তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবের সভাপতি সৌমিত্র চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার বড় দারোগাহাটে বক্তব্য দেওয়ার সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী এস এম আল মামুনের ছবি তুলতে গেলে তাঁকে সেখানে জড়ো হওয়া কয়েকজন নেতা-কর্মী ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। তাঁর দুটি দাঁত পড়ে গেছে।