ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে, ভোগান্তিতে জামালপুরের মানুষ
প্রচণ্ড দাবদাহের পাশাপাশি বেশির ভাগ পুকুর ও জলাশয় ভরাট হওয়ায় এই সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
জামালপুর শহর ও সদর উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। এসব এলাকার অধিকাংশ সাধারণ পাম্প ও নলকূপে পানি উঠছে না। ফলে সুপেয় ও গৃহস্থালির কাজে পানির সংকটে এসব এলাকার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। প্রচণ্ড দাবদাহের পাশাপাশি বেশির ভাগ পুকুর ও জলাশয় ভরাট হওয়ায় এই সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রচণ্ড দাবদাহ, বৃষ্টি না হওয়া, শহরের বেশির ভাগ পুকুর ও জলাশয় ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণ ও অপরিকল্পিত সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন ভূগর্ভস্থ পানির স্তরকে ক্রমেই নিচে নামিয়ে দিচ্ছে। ভৌগোলিক অবস্থায় জামালপুর শহর ও সদর উপজেলায় সাধারণত পানির স্তর ২০ ফুটের নিচে নামলে হস্তচালিত নলকূপ থেকে পানি ওঠে না। যদি তা ২২ থেকে ২৩ ফুটের নিচে নেমে যায়, তাহলে বাসাবাড়িতে মোটর (সাধারণ পাম্প) দিয়ে পানি তোলাও অসম্ভব হয়ে পড়ে।
জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অপরিকল্পিতভাবে সাবমারসিবল পাম্প স্থাপনের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। পৌর শহরে সাধারণত পানির স্তর ২০ ফুটের নিচে নামলে হস্তচালিত নলকূপ থেকে পানি উঠে না। যদি তা ২২ থেকে ২৩ ফুটের নিচে নেমে যায়, তাহলে বাসাবাড়িতে মোটর দিয়ে পানি তোলাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। এখন পৌরসভা ও সদর উপজেলার বেশির ভাগ এলাকায় পানির স্তর ২৪ ফুটের নিচে নেমে গেছে।
জানা গেছে, জামালপুর পৌরসভায় প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার ৩৫৮ ও সদর উপজেলায় ৬ লাখ ১৫ হাজার ৭২ মানুষের বাস। পৌরসভাসহ উপজেলায় প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার নলকূপ রয়েছে। তার মধ্যে ৮০ শতাংশ নলকূপে পানি উঠছে না। ফলে বিশাল এই জনগোষ্ঠী সুপেয় ও গৃহস্থালির কাজে পানির সংকটে ভুগছে। বানিয়াবাজার, বজ্রাপুর, মুকন্দবাড়ি, পূর্ব মুকন্দবাড়ি, মৃধাপাড়া, ডাকপাড়া, বেলটিয়া, মুসলিমাবাদ, জিগাতলাসহ পৌরসভার বেশির ভাগ এলাকায় প্রায় এক মাস থেকে নলকূপে এক ফোঁটাও পানি ওঠে না। এসব এলাকার বাসাবাড়ির মোটর দিয়ে পানি ওঠে না। সুপেয় পানির জন্য মানুষ প্রতিদিন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। অনেক পরিবার প্রতিবেশীর বাড়িতে থাকা সাবমারসিবল পাম্প থেকে খাওয়ার ও গৃহস্থালির পানি সংগ্রহ করছেন। অনেকে আবার এলাকায় থাকা মসজিদের সাবমারসিবল পাম্প থেকে পানি সংগ্রহ করছেন।
পূর্ব মুকন্দবাড়ির বাসিন্দা হালিমা খাতুন বলেন, ‘পানির জন্য প্রায় এক মাস থেকে কষ্ট করতে হচ্ছে। ভাড়া বাড়িতে থাকি, নলকূপ থেকে পানি ওঠে না। প্রতিবেশীর সাবমারসিবল পাম্প থেকে দিনে দুইবার পানি নিয়ে চলছি। মেপে মেপে পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে।’
একই এলাকার মজিবর রহমান বলেন, প্রায় তিন মাস ধরে সাধারণ মোটর দিয়ে পানি ওঠে না। পরে বাধ্য হয়ে পাশেই জামাতার বাসা, তাঁর সাবমারসিবল পাম্প থেকে পাইপ দিয়ে পানির ট্যাংক ভরে নিই। এই এলাকার কারও নলকূপ ও সাধারণ মোটরে পানি ওঠে না।
বানিয়া বাজার এলাকার আকলিমা বেগম বলেন, ‘নলকূপ দিয়ে এক ফোঁটাও পানি বের হয় না। প্রতিবেশী এক আত্মীয়ের বাসায় সাবমারসিবল পাম্প রয়েছে। সেখান থেকেই পানি নিয়ে চলছি। প্রতিদিন একজনের বাড়িতে গিয়ে পানি আনা কতটা কষ্টের, সেটা বোঝানো যাবে না।’
মুকন্দবাড়ির আরিফা খাতুন বলেন, ‘প্রায় তিন মাস ধরে পানি ওঠে না। প্রতিবেশীর এক বাড়িতে গিয়ে গোসল করে আসি। সেখান থেকেই পানি নিয়ে গৃহস্থালির কাজকর্ম করছি।’
সদর উপজেলা পরিষদ-সংলগ্ন ফিরোজ মিয়া নামের এক হোটেল ব্যবসায়ী বলেন, ‘একসময় নলকূপের পানি দিয়ে হোটেল চালাতাম। কিন্তু নলকূপ থেকে পানি ওঠে না। পরে সাধারণ মোটর লাগালাম। কিছুদিন পানি ভালোই উঠেছে। তিন-চার মাস ধরে মোটর দিয়ে এক ফোঁটাও পানি ওঠে না। পানি না থাকায় এক মাস ধরে আমার হোটেল বন্ধ রয়েছে। এখন শুধু আল্লাহ আল্লাহ করি, কয়েক দিন ভারী বৃষ্টি হোক। ভারী বৃষ্টি হলে মোটর থেকে পানি উঠতে পারে।’
জামালপুরের জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সুলতান মাহমুদ বলেন, পৌর শহরের বেশির ভাগ এলাকায় বর্তমানে পানির স্তর ২৪ ফুট নিয়ে রয়েছে। এলাকাভিত্তিতে এটা কমবেশি আছে। ৮০ শতাংশ নলকূপ থেকে পানি উঠছে না। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রচণ্ড দাবদাহ, বৃষ্টি না হওয়া এবং বেশির ভাগ নদী-নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় এই সমস্যা প্রকট হয়েছে। পানির সমস্যা সমাধানে উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।