আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে পল্লিচিকিৎসককে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ

পল্লিচিকিৎসককে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে স্বজনদের সংবাদ সম্মেলন। মঙ্গলবার দুপুরে যশোর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে যশোর শহরের খড়কি এলাকা থেকে মো. সেলিম হোসেন (৪৫) নামের এক পল্লিচিকিৎসককে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ২ ফেব্রুয়ারি নিজ চেম্বার থেকে ওই পল্লিচিকিৎসককে একটি সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে যশোর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সেলিমের স্ত্রী-সন্তানেরা সংবাদ সম্মেলন করেন। সেলিম হোসেন ‘গ্রাম্য ডাক্তার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের’ কেন্দ্রীয় সহকারী সাধারণ সম্পাদক। তিনি যশোর সদর উপজেলার খোলাডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর নিখোঁজের পরদিন ৩ ফেব্রুয়ারি কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন সেলিমের স্ত্রী নাজমা খাতুন। এ বিষয়ে ছায়া তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)

সংবাদ সম্মেলনে সেলিমের দুই স্ত্রী আলজিয়া খাতুন, নাজমা খাতুনসহ তাঁদের চার সন্তান ও গ্রাম্য ডাক্তার ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে সেলিমের দ্বিতীয় স্ত্রী নাজমা খাতুন বলেন, সেলিম দীর্ঘদিন ধরে যশোর শহরের খড়কি এলাকার গাজীর বাজারে ‘রিনা মেডিকেল’ নামে একটি ফার্মেসির চেম্বারে নিয়মিত চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছিলেন। ২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাতটার দিকে তাঁর চেম্বারের সামনে একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাস এসে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে ৩৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ১০ থেকে ১২ জন নেমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে সেলিমকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যান। বিষয়টি আশপাশের দোকানের লোকজন দেখেছেন ও শুনেছেন। পরে সেলিমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সেটিও বন্ধ পাওয়া যায়। ঘটনার পরদিন তিনি কোতোয়ালি থানায় একটি অভিযোগ করেন।

কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জুবায়ের হোসেনকে ওই অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এসআই জুবায়ের হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযোগের পর ঘটনাস্থলে গিয়েছি। খোঁজখবর নিয়েছি। তবে এখন পিবিআইয়ের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ইমদাদুল ইসলাম বিষয়টি তদন্ত করছেন।’

এএসআই ইমদাদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাম আসায় পিবিআইয়ের যশোরের পুলিশ সুপারের নির্দেশে ছায়া তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। একটি মুঠোফোনের তথ্য সূত্র ধরে এখনো তদন্ত চলছে।

মো. সেলিম হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

যশোর শহরের খড়কি এলাকার মুদিদোকানি মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার আগে একটি মাইক্রোবাস এসে আমার দোকানের পাশে দাঁড়ায়। আমার দোকানে তখন ক্রেতা ছিলেন। ওই মাইক্রোবাস থেকে ৮-১০ জন নেমে সেলিমের চেম্বারে যান। তখন ওই চেম্বার থেকে দুজন রোগী এসে আমাকে বলেন, “সেলিম ডাক্তারের ঘরে পুলিশ এসেছে।” শুনে আমি সেলিমের চেম্বারে যাই। তখন ওই লোকেরা আমার কাছে জানতে চান, “আপনি কে?” আমি পাশের দোকানদার পরিচয় দিলে তাঁরা বলেন, “আমরা আইনের লোক। কাউকে ফোন দেওয়ার দরকার নেই। আপনি যান।” এরপর আমি বেরিয়ে আসি। পরে সেলিমকে তাঁরা গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যান।’

সংবাদ সম্মেলনে নাজমা খাতুন আরও বলেন, দুটি পরিবারে তাঁদের তিন ছেলে ও একটি মেয়ে আছে। এর মধ্যে একটি সন্তান বাক্‌প্রতিবন্ধী। দুই পরিবারই সেলিমের আয়ের ওপর নির্ভরশীল। তাঁর অনুপস্থিতিতে পরিবার দুটি অসহায় দিন যাপন করছে। প্রতিবন্ধী ছেলে ও ছোট মাসুম বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও তাঁদের স্বামীকে ফিরিয়ে দিতে প্রশাসন ও সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন সেলিমের দুই স্ত্রী।

গ্রাম্য ডাক্তার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সহকর্মী সেলিম নিখোঁজ হওয়ার পরপরই আমরা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। এ ছাড়া পিবিআই ও র‍্যাবকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। সাত দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো ফল না পেয়ে আমরা হতাশ হয়েছি।’

এ বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কিছুই জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।