জয়পুরহাটে কারাবন্দী জঙ্গি নেতার মৃত্যু
জয়পুরহাটের ক্ষেতলালের কারাবন্দী জঙ্গি নেতা মন্তেজার রহমান মারা গেছেন। গতকাল মঙ্গলবার বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। আজ বুধবার ময়নাতদন্ত শেষে তাঁর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
আজ সকালে জয়পুরহাটের জেল সুপার রীতেশ চাকমা জানান, জঙ্গি নেতা মন্তেজার রহমান ২০০৭ সাল থেকে জয়পুরহাট জেলা কারাগারে বন্দী ছিলেন। তিনি ক্ষেতলাল উপজেলার উত্তর মহেশপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) আঞ্চলিক নেতা ছিলেন।
জেলা কারাগার সূত্রে জানা যায়, মন্তেজার রহমান কারাবন্দী অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে হার্ট, কিডনির সমস্যাসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন। গত সোমবার তিনি কারাগারে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে দ্রুত ২৫০ শয্যার জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। গতকাল বেলা দুইটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
পুলিশ ও আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালের ১৪ আগস্ট রাতে ক্ষেতলালের উত্তর মহেশপুর গ্রামে জঙ্গি নেতা মন্তেজারের বাড়িতে জেএমবির শীর্ষ নেতারা গোপনে বৈঠক করছিলেন। খবর পেয়ে রাতেই বাড়িটি ঘেরাও করে জয়পুরহাট সদর থানার পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে জেএমবির সদস্যরা হামলা চালিয়ে সদর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ ছয় পুলিশ সদস্যকে গুরুতর জখম করেন। এ সময় ৩টি শটগান, ৪৫টি গুলি ও ১টি ওয়াকিটকি ছিনিয়ে নেন তাঁরা। পরে ওই দিন রাতেই অভিযান চালিয়ে ১৯ জঙ্গিকে আটক করে পুলিশ।
ওই ঘটনায় ৩৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৭০ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ। এজাহারে অস্ত্র লুট, পুলিশ সদস্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে জখম ও মারধরের অভিযোগ আনা হয়। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ১৩ আসামি ২০০৪ সালের বিভিন্ন সময়ে আদালত থেকে জামিন পান। এর পর থেকেই তাঁরা পলাতক। তবে ২০০৭ সাল থেকে মন্তেজার রহমান কারাগারে ছিলেন।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দিনাজপুর অঞ্চলের পরিদর্শক জালাল উদ্দীন মামলাটি তদন্ত করে ২০০৮ সালের ৩০ জানুয়ারি ৬০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। কিন্তু হামলার সময় আসামি মন্তেজারের বাড়ির পাশে অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার হলেও বিস্ফোরক আইনে কোনো মামলা করেনি পুলিশ। এ জন্য ২০০৯ সালের ১২ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নৃপেন্দ্রনাথ মণ্ডল মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করেন। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে সিআইডিকে আবার তদন্তের আদেশ দেন।
সিআইডির দিনাজপুর জেলার সহকারী পুলিশ সুপার শেখ আহসান-উল কবীর অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি পুনরায় তদন্ত করে ২০১০ সালের ২৫ মে ৬০ জনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে আদালতে পৃথক আরেকটি অভিযোগপত্র দেন। দুটি মামলার অভিযোগ গঠন ও বিচারকাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন জয়পুরহাট আদালতের পুলিশ পরিদর্শক আবু বকর সিদ্দিক।