২ বিঘা জমির মালিক আয়েন উদ্দিনের এখন ৭৭ বিঘা জমি
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন গত নির্বাচনে তাঁর হলফনামায় নিজের নামে শুধু দুই বিঘা কৃষিজমি থাকার কথা উল্লেখ করেছিলেন। পাঁচ বছরের ব্যবধানে সেই দুই বিঘা জমি বেড়ে হয়েছে ৭৭ বিঘা। শুধু তা–ই নয়, ইজারা নিয়ে মাছের চাষ করছেন আরও ২৩৩ বিঘা জমিতে।
রবীন্দ্রনাথের ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনের মতোই আয়েনেরও শুধু ‘দুই বিঘা’ জমি ছিল। কবিতায় উপেনের উচ্চারণ ছিল, ‘শুধু বিঘে-দুই ছিল মোর ভুঁই।’ সেই দুই বিঘা জমিও তাঁকে হারাতে হয়েছিল। আর আয়েন উদ্দিন দুই বিঘা থেকে ৭৭ বিঘা জমির মালিক হয়েছেন। আয়েন উদ্দিন উপেনের মতো জমি না হারালেও এবার দলীয় মনোনয়ন হারিয়েছেন। হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। মনোনয়ন না পেয়ে কেঁদেছেনও।
মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় তাঁর নিজ নামে দুই বিঘা কৃষিজমি ছিল। অথচ কৃষি থেকে আয় দেখিয়েছিলেন ১১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। কোনো মৎস্য খামার দেখাননি তখন। অথচ মৎস্য চাষ থেকে আয় দেখানো ছিল ২০ লাখ টাকা। এবারের নির্বাচনে তাঁর নিজ নামে কৃষিজমির পরিমাণ দেখিয়েছেন ৭৭ বিঘা। যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার ৩২৬ টাকা। আর ইজারা নিয়ে মাছ চাষ দেখিয়েছেন ৭৭ দশমিক ৭৯ একর (প্রায় ২৩৩ বিঘা) জমিতে। এ থেকে আয় দেখিয়েছেন ১৭ লাখ ৬১ হাজার ৮৬৩ টাকা। জমি বাড়ার পরও আগের মেয়াদের চেয়ে তিনি এবার আয় কম দেখিয়েছেন।
জানতে চাইলে রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, গত ১০ বছর সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি সম্মানী পেয়েছেন। তিনি নিজে জমি ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করেছেন। এসব আয়ের ওপর তিনি কর দিয়েছেন। তাঁর সবকিছু পরিষ্কার। বিলের পতিত জমি অল্প দামে পেয়েছেন, তাই কিনেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
গত মেয়াদে তিনি আনুমানিক বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ৩৯ লাখ ৪৫ হাজার ৫০৬ টাকা। এই আয় তাঁর দশম নির্বাচনের আয়ের প্রায় ১৬ গুণ ছিল। আর দশম সংসদ নির্বাচনের সময় তাঁর হলফনামায় বার্ষিক মোট আয় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা উল্লেখ ছিল। একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তাঁর দাখিল করা হলফনামা থেকেই আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে প্রথমবারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হন আয়েন উদ্দিন। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি দলের মনোয়ন পেয়েছিলেন। এবার তাঁর আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান। গত ২৯ নভেম্বর আয়েন উদ্দিন ঢাকা থেকে রাজশাহীতে এসে বিমানবন্দরে নেমে কর্মী–সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আয়েন উদ্দিনের বাড়ি মোহনপুর উপজেলার মহিষকুন্ডি গ্রামে। তিনি বর্তমানে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
এবার আয়েন উদ্দিনের নিজের ব্যাংক হিসাবে কোনো টাকা নেই। তাঁর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে ৮৯ হাজার ৪৭৩ টাকা দেখিয়েছেন। গত নির্বাচনের সময় আয়েন উদ্দিনের ব্যাংকে ছিল ৪৩ লাখ ৮২ হাজার ৯২২ টাকা। আর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে ছিল ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৬৯১ টাকা। তাঁর স্ত্রী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।
রাজশাহী–৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামানের শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পর্যন্ত। এই আসনে জাতীয় পার্টির দুজন প্রার্থী রয়েছেন। একজন সোলাইমান হোসেন ও অপরজন আবদুস সালাম খান। এর মধ্যে সোলাইমান হোসেন স্বশিক্ষিত প্রার্থী, আবদুস সালাম খানের শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিক। বিএনএম পার্টির প্রার্থী এ কে এম মতিউর রহমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএ (এলএলবি)। বিএনএফ পার্টির প্রার্থী বজলুর রহমান স্বশিক্ষিত। আর এনপিপি পার্টির প্রার্থী সইবুর রহমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত।