নারায়ণগঞ্জে বিজয় দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে এসে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষ, একজনকে কুপিয়ে জখম
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে শহীদ মিনারে বিজয় দিবসের শ্রদ্ধা জানাতে এসে বিএনপির দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় যুবদলের এক কর্মীকে কুপিয়ে জখম করা হয়। আহত হয়েছেন উভয় পক্ষের অন্তত ১২ জন।
আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সোনারগাঁ উপজেলা চত্বরে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম ওরফে মান্নান ও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. রেজাউল করিমের সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়।
আহত ব্যক্তিরা হলেন আজহারুল ইসলামের অনুসারী যুবদল কর্মী মো. রতন, মামুন মোল্লা, রনি মোল্লা, মোবারক মোল্লা, রিফাত মোল্লা ও মো. ভুবন এবং রেজাউল করিমের অনুসারী কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, সোনারগাঁ যুবদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক নূর ই ইয়াসিন, যুবদল নেতা আতাউর রহমান, হাবিবুর রহমান, যুবদল কর্মী শাহ পরান ও শাহ আলম। তাঁদের মধ্যে যুবদল কর্মী মো. রতনকে সংঘর্ষের জের ধরে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হয়েছেন। তাঁদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
উভয় পক্ষের নেতা-কর্মী, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোনারগাঁ বিএনপির একসময়ের প্রভাবশালী নেতা রেজাউল করিম ও বর্তমান সভাপতি আজহারুলের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ দীর্ঘদিনের। আজ সকাল ১০টায় আজহারুল তাঁর অনুসারীদের নিয়ে উপজেলা চত্বরে অবস্থিত সোনারগাঁ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিজয় দিবসের শ্রদ্ধা জানান। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা রহমান ও সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল বারীর সঙ্গে বৈঠক করেন আজহারুল। আজহারুলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী শহীদ মিনার থেকে চলে গেলেও কিছু নেতা-কর্মী উপজেলা চত্বরে অপেক্ষমাণ ছিলেন। এ সময় নেতা-কর্মীদের নিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন রেজাউল। তখন উপজেলা চত্বরে থাকা আজহারুলের সমর্থক ও রেজাউলের সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি স্লোগান, কটূক্তি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে পুরো উপজেলা চত্বরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শ্রদ্ধা জানাতে আসা সাধারণ লোকজন শহীদ মিনার ছেড়ে সরে যান।
সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক সেলিম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা উপজেলা চত্বরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এ সময় রেজাউলের লোকজন শ্রদ্ধা জানাতে এসে আজহারুল সাহেবের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করেন। রেজাউলের সঙ্গে তখন সোনারগাঁ পৌরসভা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক তপন ফারুক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উমর ফারুক, পিরোজপুর ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি সিরাজুল ইসলামসহ জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা ছিলেন। তাঁরা গত ১৫ বছর আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর জুলুম–অত্যাচার করেছেন। আজহারুল সাহেবের নেতা-কর্মীরা তখন জাতীয় পার্টির নেতাদের উদ্দেশ্য করে স্লোগান দেন, “রেজাউলের সঙ্গে কারা, ফ্যাসিবাদের দালালেরা।” এই স্লোগানকে কেন্দ্র করে তখন উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ হয়। পরে রতন নামে আমাদের একজন যুবদল কর্মী বাড়িতে ফেরার সময় তাঁকে যুবদল নেতা নূর ই ইয়াসিনসহ তাঁর লোকজন কুপিয়ে জখম করেন।’
তবে নূর ই ইয়াসিন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আজহারুল সাহেবকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নির্ধারিত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। সেই সময়ের পর আমরা নেতা-কর্মী নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে গেলে সেখানে থাকা আজহারুল সাহেবের লোকজন আমাদের কটূক্তিসহ নানা স্লোগান দেন। এ নিয়ে সংঘর্ষ হয়। আমি কোনো যুবদল কর্মীকে মারধর করিনি।’
সোনারগাঁ থানার ওসি মোহাম্মদ আবদুল বারী বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি সেখানেই ছিলাম। পুরোনো বিরোধ থেকে হাতাহাতি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ হয়েছে। আমরা দ্রুতই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি। পরে শুনেছি, এক যুবদল নেতাকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’