সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত এই সরকারকে সময় দিতে হবে

খাগড়াছড়িতে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। সোমবার খাগড়াছড়ি টাউন হলেছবি: প্রথম আলো

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সময় দিতে হবে। আমরা আর স্বৈরাচার সরকারের মতো রাতের ভোট চাই না। যত দিন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ভোটের নিশ্চয়তা দিতে না পারে, তত দিন ভোট হবে না।’

আজ সোমবার খাগড়াছড়িতে ছাত্র–জনতার সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় হাসনাত আবদুল্লাহ এ কথা বলেন। খাগড়াছড়ি ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা আজ বরিশাল, কুষ্টিয়া, গাইবান্ধা ও নরসিংদীতে পৃথক মতবিনিময় সভা করেছেন।

গতকাল রোববার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের সফর শুরু হয়েছে। এ সফরে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক দল প্রতিটি জেলার অভ্যুত্থান ঘটানো ছাত্র-জনতা, রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করছেন। এর আগে সারজিস আলমের নেতৃত্বে রোববার মুন্সিগঞ্জে যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি প্রতিনিধিদল।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জীবনানন্দ দাশ কনফারেন্স হলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতবিনিময়। আজ সোমবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জীবনানন্দ দাশ কনফারেন্স হলে আজ দুপুর ১২টায় মতবিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, ‘আমরা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণ–অভ্যুত্থান এবং ২০২৪-এর গণ–অভ্যুত্থানে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করেছি। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তীকালে রাষ্ট্র সংস্কার ও পুনর্গঠনের সময় বিভাজন তৈরি হয়েছে। ফলে আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। কিন্তু এবার সেটাকে আর ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। আমরা এবার শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে যেভাবে আন্দোলন করেছি, ঠিক তেমনিভাবেই এখনো আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থেকে রাষ্ট্র সংস্কার ও মেরামত করতে হবে।’

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জীবনানন্দ দাশ কনফারেন্স হলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন এক শিক্ষার্থী। আজ সোমবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

বিকেলে নগরের বান্দরোডে শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এবং সন্ধ্যায় সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজে পৃথক মতবিনিময় সভা হয়। এসব সভায় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আরেক সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজানা অফিফা অদিতি, এম এ সাইদ, রাইয়ান ফেরদৌস, বদরুন্নেসা কলেজের সিনথিয়া জাহিন আয়েশা, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসিবুল হোসাইন শান্ত, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মোবাশ্বেরা করিম মিমি, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৌহিদ আহমেদ আশিক, ঢাকা কলেজের জিহাদ হোসেন ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদুল ইসলাম শাহেদ, সুজন মাহমুদ, সিরাজুল ইসলামসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

আরও পড়ুন

কুষ্টিয়ায় মতবিনিময় সভায় সমন্বয়কেরা বলেছেন, জেলার বিভিন্ন সমস্যা, অনিয়ম–দুর্নীতি বিষয়ে নানা অভিযোগ আসছে। তাঁরা বলেছেন, ‘অতি দ্রুত একটা রোডম্যাপ করা হচ্ছে, জেলা সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হবে।’

কুষ্টিয়ায় ছাত্র–জনতার সঙ্গে মতবিনিময় করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতারা। আজ সোমবার বিকেল চারটায় কুষ্টিয়া পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে
ছবি: তৌহিদী হাসান

খুলনা বিভাগীয় ছাত্র–জনতা মৈত্রী সফরের অংশ হিসেবে ঢাকা থেকে সমন্বয়কারীরা গতকাল সকালে কুষ্টিয়ায় আসেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম, সহসমন্বয়ক ওয়াহিদ উজ্জামান, আকরাম হোসাইন, আশরেফা খাতুন, আবু বকর খান, ফারহানা ফারিনা, মুইনুল ইসলাম, বিশ্বজিৎ দত্ত, তৌহিদ ইসলাম, বাবু খান, জান্নাত, নাহিদ উদ্দীন, সাঈদ আপ্রিদী, মেহেদী হাসান, শাকিল হোসেন প্রমুখ। সমন্বয়কদের দলটি সকাল ১০টায় কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ছাত্র–জনতার আন্দোলনে হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। হরিপুর এলাকায় নিহত দুজনের কবর জিয়ারত করেন। দুপুর ১২টার দিকে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রধান ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সমন্বয়কেরা।

বৈঠকে নুসরাত তাবাসসুম বলেন, ‘কুষ্টিয়া জেলায় পুলিশ এখনো সক্রিয়ভাবে কাজে যোগ দেয়নি। পৌরসভায় বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর কাজে অনুপস্থিত। জেলাতে এখনো বিভিন্ন দপ্তরে রাজনীতিকরণ হচ্ছে, চাঁদাবাজি, দখলদারি চলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার জেলা কুষ্টিয়া। করজোড়ে মিনতি করছি, আমার জেলায় এসব অনিয়ম–দুর্নীতি দেখতে চাই না।’

গাইবান্ধায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতবিনিময় সভা
ছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধায় ছাত্র ও নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভাটি বিকেলে শহরের স্বাধীনতা প্রাঙ্গণ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, তরিকুল ইসলাম, আবু সাইদ নিয়ন, আব্দুল মুনইম, রকিব মাসুদ, এস আই শাহীন, মিশু আলি সুহাস, মুমতাহিনা মাহজাবিন, জহির রায়হান, ফিহাদুর রহমান, সুমন বসুনিয়া, সজিব ইসলাম, আব্দুর রফিক, জাকারিয়া হোসেন, বিসালাত, রাকিব হাসান প্রমুখ।

দুই স্থানে হট্টগোল

খাগড়াছড়ি টাউন হলে আজ বিকেলে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সময় দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘ভূমি, পাসপোর্ট, বিআরটিসিসহ সব অফিস ঘুষ নিতে না পেরে সেখানকার কর্মকর্তা–কর্মচারীরা কাজের গতি শ্লথ করে দিয়েছেন। ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে নিয়োগকৃত কর্মকর্তা–কর্মচারীদের আমরা প্রত্যাহার করে নেব, যদি তাঁরা জনবান্ধব না হন। ৪৭, ৭১ ও ৯০–এ আমরা একত্রিত ছিলাম। কিন্তু যখনি সরকার গঠন করতে যায়, তখনি আমরা বিভাজন হয়ে যাই। তবে এবার আমাদের বিভাজন করা যাবে না।’

দুপুর থেকে টাউন হলের সামনে হাজারো শিক্ষার্থী জড়ো হন। এ সময় টাউন হলের ভেতর ও বাইরে জড়ো হয়ে চাঁদাবাজি, লুটপাট ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন তাঁরা। বিকেল পাঁচটায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টাউন হলজুড়ে হাতাহাতি শুরু হয়। পরে প্রায় ৪০ মিনিট পর সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

নরসিংদীতে প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম
ছবি: প্রথম আলো

আজ সকাল সাড়ে নয়টায় নরসিংদীতে আসেন সারজিস আলমের নেতৃত্বাধীন সমন্বয়কদের দলটি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের বাসাইল এলাকার নরসিংদী ক্লাবে তিনটি বৈঠকে মিলিত হন তাঁরা। প্রথম বৈঠক শেষে পরের দুটি বৈঠক চলাকালে নরসিংদী ক্লাবের ভেতরে স্থানীয় সমন্বয়কদের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়। পূর্বঘোষিত সভাস্থল নিয়ে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় চলতে থাকে দুই পক্ষের মধ্যে। সারজিস আলম দুটি ভেন্যু বাদ দিয়ে শহরের পৌর পার্কে সভার আয়োজন করতে বলেন। তাতেও সমাধান না হওয়ায় মতবিনিময় সভা স্থগিত করে বিকেলে প্রতিনিধিদল নিয়ে নরসিংদী ত্যাগ করেন সারজিস আলম।

প্রতিনিধিদলে থাকা কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুল্লাহ সালেহীন অয়ন বলেন, স্থানীয় সমন্বয়কদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে অন্য কোনো দিন নরসিংদীতে মতবিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা]