বরিশালে খায়ের আবদুল্লাহ ও সাদিক আবদুল্লাহর কোলাকুলি
বরিশালে এবার একই জামাতে ঈদের জামাতে নামাজ আদায় করেছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুক, বরিশালের নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত ও বিদায়ী মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাতটায় নগরের বান্দরোডে হেমায়েত উদ্দিন কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রথম জামাতে তাঁরা ঈদের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহর সঙ্গে কোলাকুলি করে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন ভাতিজা সাদিক আবদুল্লাহ।
নগরীতে পবিত্র ঈদুল আজহার প্রধান এই জামাতে আরও ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান, জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক অঙ্গনের নেতারা। পরে তাঁরা মুসল্লিদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন। এরপর তাঁরা মুসল্লিদের সঙ্গে কোলাকুলি করে কুশল বিনিময় করেন।
নামাজ শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিদায়ী মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘মেয়র হিসেবে আপনাদের সামনে শেষবারের মতো ঈদের জামাতে বক্তব্য দিচ্ছি। মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর এ নিয়ে পাঁচটি ঈদ কাটালাম আপনাদের সঙ্গে। আজ আমরা সবাই সবার জন্য দোয়া করব, দোয়া করব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য, দোয়া করব আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর জন্য। শুভেচ্ছা আগেও জানিয়েছি, আবারও জানাই নবনির্বাচিত মেয়র আমার চাচাসহ উপস্থিত সবাইকে।’
সাদিক আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘আমার কর্মকাণ্ডে মাধ্যমে কোনো ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। এখানে আমার কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ ছিল না, আমার স্বার্থ বলতেই বরিশালবাসীর স্বার্থ ছিল। আমি আছি, ছিলাম, থাকব। যত দিন বেঁচে থাকব আমি বরিশালের মানুষের পাশে থাকব, সেবা করব। এ জন্য মেয়র থাকতে হবে—এমন কথা নেই। এই ঈদে মনের ভেতর যে কালিমা আছে, তা ধুয়ে-মুছে আমরা যেন নতুন করে সবাই এগোতে পারি।’
বরিশালবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে নবনির্বাচিত সিটি মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘বরিশালবাসী আমাকে যে সম্মান দিয়েছেন, সে জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বরিশালবাসী আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা সঠিকভাবে যেন পালন করতে পারি, সে জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চাইছি।’ সুন্দর ও আধুনিক নগর গড়তে সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা ও দোয়া চান তিনি।
নামাজ শেষে নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ও বিদায়ী মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ কোলাকুলি করে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পরে তাঁরা উপস্থিত মুসল্লিদের সঙ্গেও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
এবার বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাননি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। তাঁর ছোট চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর বরিশালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নেতা-কর্মীরা দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েন। চাচা-ভাতিজার দ্বন্দ্ব নিয়ে সারা দেশে আলোচনা তৈরি হয়। এদিকে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক জেলা কমিটির সহসভাপতি হলেও এত দিন দলীয় কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পেতেন না। এবার সাদিক আবদুল্লাহ দলের মনোনয়ন না পাওয়ায় আওয়ামী লীগের বঞ্চিত নেতা-কর্মীরা একজোট হন। তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হন প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণের অনুসারী নেতা-কর্মী এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সমর্থকেরা। নির্বাচনে জাহিদ ফারুকের অনুসারীরা সার্বক্ষণিক আবুল খায়ের আবদুল্লাহর পাশে ছিলেন।
১২ জুনের বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট দিতে বরিশালে আসেননি সাদিক আবদুল্লাহ। আবুল খায়ের আবদুল্লাহ মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর আজ ঈদের জামাতে চাচা-ভাতিজার প্রথম দেখা এবং কোলাকুলি করে শুভেচ্ছা বিনিময় হলো।