স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার, চিরকুটে পাশাপাশি কবর দেওয়ার অনুরোধ
গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তার পাশে বেগুনবাড়ি এলাকায় একটি বহুতল ভবনের নিচতলা থেকে স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার হয়েছে। লাশের পাশে চিরকুট পেয়েছে পুলিশ। এতে পাশাপাশি দুজনকে কবর দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আজ শুক্রবার সকাল আটটার দিকে বেগুনবাড়ি এলাকার ফারুক খানের বাড়ির নিচতলার কক্ষ থেকে লাশ দুটি উদ্ধার হয়। মৃত মো. ইসরাফিল (১৭) শেরপুরের ঝিনাইগাতি উপজেলার হলদি গ্রামের মফিজুল হকের ছেলে এবং তার স্ত্রী রোকেয়া খাতুন (১৫) ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পস্তারি গ্রামের আবুল কাশেমের মেয়ে। পরিবারের অমতে কয়েক মাস আগে তারা বিয়ে করে। পরে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি মেনে নেন।
ওই দুজনের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ইসরাফিল কিছুই করতেন না। তার বাবা ওই চারতলা ভবনের নিরাপত্তা প্রহরী; মা কাজলী বেগম ভবনের পাশেই চায়ের দোকান চালান। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা ওই বাড়িতে ভাড়া থাকেন। পুলিশ এসে লাশের পাশে পড়ে থাকা চিরকুট উদ্ধার করে। এ ছাড়া ঘরে থাকা ইসরাফিলের লেখা একটি ডাইরিতে স্ত্রীকে নিয়ে লেখা ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
চিরকুটে লেখা রয়েছে, ‘মা-বাবা আমাকে মাফ করে দিও। আমি তোমাদের সাথে থাকতে পারলাম না। আমার জান, আমার জন্য ফাঁসিতে ঝুলেছে। তাই আমি থাকতে পারলাম না। আমি কাউকে দোষারোপ করি না। কারো কোনো দোষ নাই। আমার জান, আমার জন্য অপেক্ষা করতাছে। সবাই ভালো থাকবা। মা, আমার পাশে রোকেয়ার কবর দিও মা। মা, আমি জানি না আমার জান কেন ফাঁসি দিল। তার জন্য সম্পূর্ণ আমি দায়ী। এতে কারো কোনো দোষ নাই।’
আজ সকাল ১০টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের প্রধান ফটকের সামনে মানুষের জটলা। ভেতরে পুলিশ। ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে বিছানায় পাশাপাশি ইসরাফিল ও রোকেয়ার নিথর দেহ পড়ে আছে। পাশে অন্য একটি কক্ষে বিলাপ করছেন ইসরাফিলের মা কাজলী বেগম, বোন মোছা. সানিয়া ও ভাই মো. কামরুজ্জামান।
কাজলী বেগম জানান, সাত মাস আগে ইসরাফিল ও রোকেয়া প্রেম করে বিয়ে করে। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের মেনে নেওয়া হয়। বিয়ের পর একই ভবনের দুটি কক্ষের একটিতে তারা দুজন থাকত। তাদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি হতে দেখেননি কেউ।
কাজলী বেগম বলেন, গতকাল রাত ১১টার দিকে খাওয়া-দাওয়া শেষে তাঁরা নিজ নিজ ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ইসরাফিল ও তার স্ত্রী ঘুম থেকে না ওঠায় ছোট ছেলে কামরুজ্জামান ঘরের দরজা ধাক্কা দেয়। দরজাটি খুলে যায়। তিনি (কাজলী) ঘরের ভিতরে গিয়ে দেখেন ছেলে ফ্যানের সঙ্গে উড়নায় ঝুলে আছে, বিছানায় পড়ে আছে রোকেয়ার দেহ। তাঁর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে ইসরাফিলের মরদেহ নিচে নামান।
ইসরাফিলের বাবা মফিজুল হক বলেন, আত্মহত্যা করে তাঁর ছেলে চিঠি লিখে গেছে। কিন্তু কেন এমন করল, তা বুঝতে পারছেন না। চিঠি পড়ে মনে হয়েছে স্ত্রী আত্মহত্যা করার পর ইসরাফিল ফাঁসিতে ঝুলেছে।
তবে রোকেয়ার ভাই বোরহান উদ্দিন বলেন, সম্প্রতি মা–বাবার সঙ্গে ইসরাফিলের মনোমালিন্য হয়। স্ত্রীকে নিয়ে সে বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। পরিবারের সদস্যরা তাঁদের গত বৃহস্পতিবার সকালে বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন। আজ সকালে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্বজনদের মাধ্যমে খবর পান। কী কারণে এমনটি হয়েছে, তা তিনিও ধারণা করতে পারছেন না।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গাজীপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (কালিয়াকৈর সার্কেল) আজমীর হোসেন বলেন, চিরকুটের লেখা ও তার ডায়েরির লেখার মধ্যে প্রাথমিকভাবে মিল আছে বলেই মনে হচ্ছে। এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে। সবকিছু দেখে ধারণা করা হচ্ছে, তারা আত্মহত্যা করেছে। তবে লাশ ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা যাবে।