নওগাঁয় অকেজো ১২ কোটি টাকার বর্জ্য পরিশোধনাগার
প্রকল্পটি চালু করা না যাওয়ায় ল্যান্ডফিলের পাশে উন্মুক্ত স্থানে এখনো বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এতে দুর্গন্ধ যেমন ছড়াচ্ছে, পরিবেশও দূষিত হচ্ছে।
নওগাঁ পৌরসভার স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগার প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে। তবে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর প্রায় আড়াই বছরেও কারিগরি ত্রুটির কারণে চালু করা যায়নি প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বর্জ্য পরিশোধনাগারটি। এতে শহরের বর্জ্য ল্যান্ডফিলটির পাশে উন্মুক্ত স্থানে ফেলা হচ্ছে। এতে পরিবেশদূষণ যেমন হচ্ছে, পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।
পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রকল্পের ডিজাইনে ত্রুটির কারণে প্রকল্পটি দুই বছরেও চালু করা যায়নি। প্রকল্পটির নকশায় পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করার কোনো পদ্ধতি বা যান্ত্রিক ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া প্রকল্প এলাকায় এখনো বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়া হয়নি। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার দুই বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পটি চালু করা না হওয়ায় ইতিমধ্যে স্থাপন করা সরঞ্জাম নষ্ট হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নওগাঁ পৌরসভার স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগার প্রকল্পটির অবস্থান শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কোমাইগাড়ী এলাকায় ডিগ্রির মোড়-বাইপাস সড়কের পাশে। প্রকল্প অবকাঠামো নির্মাণের আগেও ওই স্থানেই শহরের বাসাবাড়ির বর্জ্য ফেলা হতো। প্রকল্পটি চালু করা না যাওয়ায় ল্যান্ডফিলের পাশে উন্মুক্ত স্থানে এখনো বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এতে দুর্গন্ধ যেমন ছড়াচ্ছে, আশপাশের পরিবেশও দূষিত হচ্ছে।
নওগাঁ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁয় আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় ২০১৮ সালে স্যাানিটারি ল্যান্ডফিল ও পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগার নামের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতীকরণ প্রকল্পের (ইউজিআইআইপি-৩) অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ২০২০ সালে ৩০ নভেম্বর দরপত্র আহ্বান করে নওগাঁ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। দরপত্র বাছাই শেষে ২০২১ সালের ১৩ এপ্রিল প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স খান বিল্ডার্স-ইথেন এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। শহরের কোমাইগাড়ী এলাকায় পৌরসভার ময়লার ভাগাড়ের পাশে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় ১১ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা। ২০২২ সালের ১২ এপ্রিল এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পৌরসভাকে কাজটি বুঝে দেয় ওই বছরের আগস্ট মাসে। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ল্যান্ডফিল ও পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগার চালু করতে পারেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। এগুলো চালু না হওয়ায় এখানে স্থাপিত যন্ত্রগুলো অকেজো হয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। পরিবেশবান্ধব প্রকল্পটি চালু করা সম্ভব হলে শহরের বাসাবাড়ির বর্জ্য ব্যবহার করে জৈব সার উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
গত রোববার সকালে নওগাঁ পৌরসভার কোমাইগাড়ী এলাকার প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ল্যান্ডফিলের পাশে একটি উন্মুক্ত স্থানে শহরের বাসাবাড়ি থেকে নিয়ে আসা ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ল্যান্ডফিলের ডাম্পিং এলাকাতেও কিছু ময়লা ফেলা হচ্ছে। ডাম্পিং এলাকায় ফেলা ময়লা থেকে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করতে কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক।
পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করার কাজে ব্যস্ত পৌরসভার পরিচ্ছনতাকর্মী সুভাষ ও আক্কাস আলী জানান, এক বছর ধরে এই ল্যান্ডফিল তৈরি হয়েছে। এই ল্যান্ডফিল যখন তৈরি হচ্ছিল, তখন শহরের ময়লা বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটা ভাগাড়ে ফেলা হতো। ল্যান্ডফিল তৈরির কাজ শেষ হওয়ার পরও শহরের বালুডাঙ্গা এলাকায় ময়লা ফেলা হচ্ছিল। কিন্তু ৫ আগস্টের পর স্থানীয় ছাত্র-জনতা বালুডাঙ্গা স্থান থেকে ময়লার ভাগাড় সরিয়ে নিতে চাপ দিলে পৌর কর্তৃপক্ষ আবার কোমাইগাড়ী এলাকায় ল্যান্ডফিলের পাশে ময়লা ফেলতে নির্দেশ দেয়। এখন এখানেই ময়লা ফেলা হচ্ছে।
এ বিষয়ে নওগাঁ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর ডিজাইনে ত্রুটির বিষয়টি আমাদের কাজে ধরা পড়ে। এই প্রকল্পে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করার যান্ত্রিক কোনো পদ্ধতি নেই। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করতে গেলে নতুন অবকাঠামো দরকার। সেটা করার জন্য ইতিমধ্যে একটি প্রকল্প প্রস্তাব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলেই টেন্ডার আহ্বান করে ঠিকাই বাছাই করে কাজ শুরু করা হবে। তবে ঠিক কবে নাগাদ প্রকল্পটি চালু করা সম্ভব হবে, তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়।