বরিশাল সদর আসনে মনোনয়ন ফরম জমা দেননি জাহাঙ্গীর কবির নানক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৫ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। এ নিয়ে বরিশালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াতে থাকে। নানক আরেকটি মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন ঢাকা-১৩ (মোহাম্মদপুর-আদাবর) আসন থেকে। অবশেষে তিনি বরিশাল-৫ আসনে মনোনয়ন ফরম জমা দেননি। ঢাকা-১৩ আসনেই মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য ও দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির বরিশাল বুথের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বলরাম পোদ্দার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, জাহাঙ্গীর কবির নানকের পক্ষে বরিশাল-৫ ও ঢাকা-১৩ এই দুই আসন থেকে মনোনয়ন ফরম তোলা হয়েছিল। তবে মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার শেষ দিন তিনি শুধু ঢাকা-১৩ আসনে মনোনয়ন চেয়ে আবেদন জমা দিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার বিকেল চারটা পর্যন্ত ছিল মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার শেষ সময়। গত শনিবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়েছিল।
বরিশাল-৫ আসনটি নানা কারণেই আলোচিত। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। তিনি ছাড়াও বরিশাল সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এই আসনে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। এ নিয়ে এমনিতেই আসনটিতে মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। এর ওপর জাহাঙ্গীর কবির নানক এই আসনে এবার নির্বাচন করতে চাওয়ার খবর যেন আগুনে ঘি ঢালে। এটাকে বরিশালে আওয়ামী লীগের রাজনীতির নতুন মেরুকরণ হিসেবেও কেউ কেউ ভাবছিলেন। তবে নানক শেষ পর্যন্ত তিনি এই আসনে মনোনয়ন না চাওয়ায় সেই আলোচনায় ভাটা পড়েছে।
সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি মেয়র থাকাকালীন অবস্থায় গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত হন। দলের মনোনয়ন পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন তাঁর চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত।
জাহাঙ্গীর কবির নানক ঢাকা-১৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। তিনি ২০০৮ ও ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি বরিশালে। তবে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে নানক ঢাকা-১৩ আসনে দলের মনোনয়ন পাননি। সেবার এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাদেক খান।
একক প্রার্থী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ
বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে দলের একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। আজ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার সময় শেষের পর দেখা গেছে, এই আসনে আওয়ামী লীগের আর কোনো প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেননি। কেন্দ্রীয় নেতা বলরাম পোদ্দার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ১ নম্বর সদস্য ও বরিশাল জেলা সভাপতি। বর্ষীয়ান এই নেতা ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনেও এই আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী ছিলেন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে তিনি এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
২১ আসনে মনোনয়ন চান ২৫৮ জন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে শনিবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে চার দিন ধরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হয়।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সূত্র জানায়, মনোনয়ন ফরম বিক্রির চার দিনের সময়সীমার মধ্যে বরিশাল বিভাগের ২১ আসনের বিপরীতে ২৫৮ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী ফরম সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন। সূত্রটি জানায়, ২৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সভায় দলীয় মনোনয়ন কারা পাচ্ছেন, তা চূড়ান্ত হবে।
আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের ভোট গ্রহণ হবে। তফসিল অনুযায়ী ৩০ নভেম্বর মধ্যে কমিশনে দল মনোনীত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। মনোনয়নপত্র বাছাই ১-৪ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ও শুনানি ৬-১৫ ডিসেম্বর এবং ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর।
তবে এই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। বিএনপি সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে।