জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা
আধুনিকায়নের উদ্যোগ অনিশ্চিত
আজ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ১১০তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে ময়মনসিংহে জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালায় নানা আয়োজন থাকছে।
ময়মনসিংহ নগরীর মানুষের প্রাণ খুলে নিশ্বাস নেওয়ার একমাত্র স্থান ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন উদ্যান। উদ্যানের পাশেই নির্মিত জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালায় তাঁর চিত্রকর্ম দেখতে দিন দিন দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। সংগ্রহশালাটি আরও প্রাণবন্ত করতে আধুনিকায়ন ও একটি সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স করার জন্য সরকার উদ্যোগ নিলেও তা থমকে রয়েছে। আজ রোববার শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ১১০তম জন্মবার্ষিকী।
ময়মনসিংহ নগরীর উত্তর পাশ দিয়ে প্রবহমান ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে কাঁচিঝুলি সাহেব কোয়ার্টার এলাকায় ১৯৭৫ সালে তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এ সংগ্রহশালার উদ্বোধন করেন। পরে সময়ে সেখানে দোতলা ভবন করা হয়। এ কাজে সরকার ৩ দশমিক ৬৯ একর জমিসহ একটি বাড়ি অধিগ্রহণ করে। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালাটি নানা চিত্রকর্ম ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে। সংগ্রহশালায় প্রথমে ৭০টি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছিল, যার অধিকাংশ তৈলচিত্র। নজরকাড়া ছবির মধ্যে ছিল শিল্পীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণকালে অঙ্কিত ছবি, গুণ টানা, নদী পারাপারের অপেক্ষায় পিতা-পুত্র এবং দুর্ভিক্ষ। এখান থেকে ১৭টি অতি আকর্ষণীয় ছবি ১৯৮২ সালে চুরি হয়ে যায়। এর মধ্যে ১০টি ১৯৯৪ সালে আবার উদ্ধার করা হয়।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, সংগ্রহশালার নিচতলায় কর্মকর্তারা বসেন। দ্বিতীয় তলার বারান্দায় শিল্পীর ৫২টি নিজস্ব ছবি রয়েছে। দুটি গ্যালারিতে বর্তমানে ৬২টি চিত্রকর্ম, জয়নুলের তুলি, খাট, পোশাকসহ ১২৭টি ব্যবহৃত জিনিস রয়েছে।
জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালার উপকিপার মুকুল দত্ত জানান, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৯ হাজার ৩০১ জন দর্শনার্থী সংগ্রহশালা দেখেছেন। ২০২২-২৩ বছরে ৩২ হাজার ৭৯৭ জন এবং ২০২৩-২৪ বছরে ৩২ হাজার ৯৫৮ জন দর্শনার্থী ঘুরে দেখেন শিল্পির চিত্রকর্ম। এখানে প্রবেশের জন্য বড়দের ২০ টাকা, ছোটদের ১০ টাকা, সার্কভুক্ত দেশের বিদেশিদের জন্য ৩০০ টাকা ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জন্য ৫০০ টাকা ফি নেওয়া হয়। সংগ্রহশালা দেখার জন্য প্রতিনিয়ত বাড়ছে দর্শনার্থী জানান এ কর্মকর্তা।
গতকাল দুপুরে কথা হয় গাজীপুর থেকে বেড়াতে আসা দর্শনাথী সানজানা হকের সঙ্গে। সে বলে, শিল্পীর আঁকা ছবিগুলোর তুলনা হয় না। চিত্রকর্মগুলো মুগ্ধ হওয়ার মতো।’
সংগ্রহশালা আধুনিকায়ন ও সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স কবে
ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে শিল্পাচার্যের অনন্য সব কীর্তি নিয়ে গড়া সংগ্রহশালাকে নতুন রূপ দিতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার তোড়জোড় শুরু করেছিল। ২০২২ সালের দিকে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজও হয়। প্রায় আড়াই শ কোটি টাকা খরচে সংগ্রহশালা আধুনিকায়নের পাশাপাশি সেখানে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স স্থাপন করার কথা ছিল। সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশাও করা হয়, কিন্তু সে উদ্যোগ আটকে রয়েছে।
জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালার উপকিপার মুকুল দত্ত বলেন, ‘প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম শেষে একনেক হয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে, এতটুকু আমাদের জানা। উদ্যোগটি বাস্তবায়ন হলে সংগ্রহশালাটি আরও বেশি প্রাণ পাবে।’
ময়মনসিংহ বিভাগীয় চারুশিল্প পর্ষদের সভাপতি মো. রাজন বলেন, সংগ্রহশালায় বর্তমানে শিল্পীরা কম যায়, বছরে একটি প্রদর্শনী ছাড়া যাওয়া আসা নেই। কারণ, সমসাময়িক সময়ে যাঁরা ছবি আঁকছেন, তাঁদের প্রদর্শনীর জন্য গ্যালারি সহজলভ্য নয় এবং খরচ বেশি। গ্যালারির মানও ভালো নয়। সমসাময়িক শিল্পীরা এখানে সহজে প্রদর্শনীর সুযোগ পেলে সংগ্রহশালাটি আরও বেশি প্রাণবন্ত হবে এবং শিল্পের বিকাশেও ভূমিকা রাখবে। সে জন্য এটি আধুনিকায়ন ও সংস্কৃতিক কমপ্লেক্সটি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান রাজন।
জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে যত আয়োজন
সংগ্রহশালায় শিল্পাচার্যের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জয়নুল শিশু চারুপীঠের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ‘আত্মপরিচয়ের সন্ধানে-১১’ শীর্ষক বার্ষিক চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। আজ থেকে শুরু হয়ে তা চলবে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালার হলরুমে প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের আয়োজনে জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ২৯ ডিসেম্বর বেলা সাড়ে ১১টায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, একই সঙ্গে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণের আয়োজন করা হয়েছে।
জয়নুল আবেদিন ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর নেত্রকোনার জেলার কেন্দুয়ায় জন্মগ্রহণ করেন।