মাদারীপুরে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, বাড়িঘর ভাঙচুর, পুলিশ সদস্যসহ আহত ৩০
মাদারীপুরে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। অন্তত ১০টি বসতঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। গতকাল বুধবার রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মাদারীপুর পৌরসভার চরখাগদী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যেরা গেলে তাঁদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান দুই পক্ষের লোকজন। এতে ১০ পুলিশ সদস্যসহ ৩০ জন আহত হন।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জনের নাম পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন মাদারীপুর সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. সেলিম সরদার, উপপরিদর্শক রবিউল ইসলাম, সহকারী উপপরিদর্শক মাসুম ব্যাপারী, কনস্টেবল মনোয়ার হোসেন, চরখাগদী এলাকার বাসিন্দা আসাদ চৌকিদার (৪০) ও তামিম মৃধা (১৭)।
হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত চুন্নু মৃধা বলেন, ‘আমাদের আশপাশের পাঁচটি ঘরে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে। জানালার একটি গ্লাসও আস্তা নাই। সব ভেঙে ফেলেছে। একটি ঘরে লুটপাট চালানো হয়েছে। আমরা মৃধা বংশের লোক, এটাই আমাদের অপরাধ। অথচ আমরা কোনো মারামারির মধ্যে ছিলাম না। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর খলিল ব্যাপারীর চাচাতো ভাই সোহরাব ব্যাপারীর ছেলে সীমান্ত ব্যাপারী গতকাল সন্ধ্যায় মোটরসাইকেল নিয়ে চরমুগরিয়া বাজারে যাচ্ছিলেন। তাঁর মোটরসাইকেলের সঙ্গে একই এলাকার মিন্টু মৃধার ছেলে আশিক মৃধার ধাক্কা লাগে। এ ঘটনার জেরে ব্যাপারী ও মৃধা বংশের লোকজন গতকাল সন্ধ্যায় চরমুগরিয়া বাজারের মতিন মৃধার দোকানে সালিসে বসেন। সালিসে দুই পক্ষের বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে মনু ব্যাপারীর ছেলে রাতুল ব্যাপারীকে মারধর করেন মিজান মৃধার ছেলে সজল মৃধা। এরপরই ব্যাপারী ও মৃধা বংশের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষের অন্তত ১০টি বসতঘরে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ২টি সাউন্ড গ্রেনেড ও শটগানের ৫৭টি গুলি ছোড়ে। এতে ১০ পুলিশ সদস্যসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিরা মাদারীপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ঘটনায় চরখাগদী এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী মনু মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমে ব্যাপারী বংশের লোকজন মৃধাদের ওপর আক্রমণ করলে মৃধারাও পাল্টা আক্রমণ চালান। চরখাগদীর রাস্তায় দুই বংশের লোকজন অবস্থান নিয়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল ও হাতবোমা ছুড়তে থাকেন। বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ছোড়া হচ্ছিল। একের পর এক বোমা বিস্ফোরণ হওয়ায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভয়ে অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে দূরে নিরাপদ স্থানে চলে যান। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ক্ষতিগ্রস্ত তাসলিমা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলেরা বাড়িতে থাকে না। আমরা গরিব মানুষ। তবু আমার ঘর কোপানো হইছে। আমি এর বিচার চাই।’
এদিকে ঘটনাস্থল থেকে মাদারীপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল বাশার ব্যাপারী (৫০), স্থানীয় বাসিন্দা আসাদ চৌধুরী (৪০), মমাসুদু রহমান (৩৫), তামিম মৃধা (১৯), জামাল চৌকিদার (৪৮), রবিউল ব্যাপারী (২৪) ও খবির উদ্দিন ব্যাপারীকে (৫২) আটক করেছে পুলিশ।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এইচ এম সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তুচ্ছ ঘটনায় ব্যাপারী ও মৃধা বংশের লোকজনের মধ্য সালিস বসে। সালিসে একজন অপরজনকে আঘাত করেন। এরপর আধিপত্য দেখাতে দুই বংশের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। তাঁরা ককটেল ও হাতবোমারও বিস্ফোরণ ঘটান। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টাকালে দুই পক্ষের লোকজনই পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা চালান। পরে পুলিশ শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উভয় পক্ষের হামলায় পুলিশের ১০ থেকে ১২ সদস্য আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কনস্টেবল মনোয়ার হোসেন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বাকিরা চিকিৎসা নিয়েছেন।
ওসি সালাউদ্দিন আরও বলেন, পুলিশ সদস্য ছাড়াও উভয় পক্ষের ২০ থেকে ২৫ জন আহত আছেন বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। ঘটনাস্থল থেকে কাউন্সিলর আবুল বাশার ব্যাপারীসহ সাতজনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হচ্ছে।