ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

ক্রসফায়ারপ্রতীকী ছবি

রাজশাহীতে পাঁচ বছর আগে এক ব্যক্তিকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে নগরের বোয়ালিয়া থানায় মামলাটি করেন ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তির বাবা মাসুদ রানা সরকার।

ভুক্তভোগী ব্যক্তির নাম রাজীব আলী। আর অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তার নাম মাহবুব হাসান। তিনি রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) উপপরিদর্শক (এসআই) ছিলেন।

আরও পড়ুন

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ওই কর্মকর্তা বর্তমানে বরখাস্ত হয়ে আছেন। তবে মাহবুবের দাবি, তাঁকে ঢাকায় বদলি করা হয়েছিল। পারিবারিক কারণে সেখানে আর যোগদান করতে পারেননি। পুলিশ সদর দপ্তরে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া আছে।

এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর তৎকালীন এসআই মাহবুব হাসান সাদাপোশাকে মাসুদ রানার বাড়িতে গিয়ে তাঁর ছেলে রাজীব আলীর (৩১) মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে নগরের শিমলা বাগানে তুলে নিয়ে যান। এরপর মাসুদ রানাকে ফোন করে জানানো হয়, তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচ লাখ টাকা না দিলে রাজীবকে ক্রসফায়ারে দেওয়া হবে। শিমলা বাগানে গিয়ে মাহবুব হাসানের হাতে পাঁচ লাখ টাকা তুলে দেন মাসুদ রানা। এ সময় মাহবুব হাসান রাজীবের বাবাকে বাড়ি চলে যেতে বলেন এবং রাজীবকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু পরদিন রাজীবকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। দীর্ঘ ১৬ মাস কারাভোগ করার পর জামিন পান রাজীব।

তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচ লাখ টাকা না দিলে রাজীবকে ক্রসফায়ারে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। পরে শিমলা বাগানে গিয়ে মাহবুব হাসানের হাতে পাঁচ লাখ টাকা তুলে দেন মাসুদ রানা। এ সময় মাহবুব হাসান রাজীবের বাবাকে বাড়ি চলে যেতে বলেন এবং রাজীবকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু পরদিন রাজীবকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। দীর্ঘ ১৬ মাস কারাভোগ করার পর জামিন পান রাজীব।

এর এক মাস আগে মাহবুব হাসানের সঙ্গে নগরের রেলগেট এলাকায় দেখা হলে তিনি টাকা ফেরত চান। তখন মাহবুব হাসান মারমুখী আচরণ করে বলেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ করেছেন। টাকা চাইলে মেরে ফেলা হবে বলে তিনি ভয় দেখান।

মাহবুব হাসানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাজীব আলীর বাসায় অভিযানের সময় তাঁর বাবাও (মাসুদ রানা) উপস্থিত ছিলেন। অভিযানের ভিডিও আছে। রাজীবের কাছ থেকে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের পরই নিয়মিত মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্র দিয়েছেন। মামলাটি যথারীতি বিচারাধীন। এখন সুযোগ বুঝে তাঁর নামে সাজানো মামলা দেওয়া হলো। এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট।

এখন সুযোগ বুঝে আমার নামে সাজানো মামলা দেওয়া হলো। এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট।
মাহবুব হাসান, পুলিশ কর্মকর্তা

মাহবুব হাসান আরও বলেন, তাঁকে বরখাস্ত করা হয়নি। ২০২১ সালে তাঁকে ঢাকায় পদায়ন করা হয়েছিল। তখন তাঁর বাবা ছিলেন। চিকিৎসার একপর্যায়ে তাঁর বাবা মারা যান। পরবর্তী সময়ে মা–ও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই সমস্যার কারণে তিনি রাজশাহী ছাড়তে পারেননি এবং নতুন কার্যালয়ে যোগদান করতে পারেননি। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে।

মাহবুব হাসান বরখাস্ত কি না, বিষয়টি জানা নেই বলে মন্তব্য করেছেন বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাসুদ পারভেজ। তিনি বলেন, এখন মামলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।