বাগেরহাটে মুছে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের আঁকা গ্রাফিতি ও দেয়াললিখন

বাগেরহাটে শিক্ষার্থীদের আঁকা গ্রাফিতি, দেয়ালচিত্র ও লিখন মুছে দেওয়া হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে শহরের বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়েছবি: প্রথম আলো

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাগেরহাটে শিক্ষার্থীদের আঁকা গ্রাফিতি, দেয়ালচিত্র ও লিখন মুছে দেওয়া হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে শহরের বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দেয়ালে লেখা ও আঁকা মুছে ফেলতে দেখা যায় ৮-১০ জনকে। এ সময় তাঁদের পাশেই ছিলেন বিদ্যালয়টির কয়েকজন শিক্ষক।

স্থানীয় লোকজন জানান, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা দিয়ে বিদ্যালয়টির দেয়ালে লেখা ও আঁকা মুছতে শুরু করেন কয়েকজন। সেখানে পুরো দেয়ালে রং করা হচ্ছে না। তুলি-ব্রাশের সাহায্যে কেবল যেসব স্থানে লেখা ও আঁকা ছিল, শুধু রং দিয়ে তা ঢেকে দেওয়া হচ্ছে। এই কাজে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা নিজেদের বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের কর্মচারী পরিচয় দিয়ে বলেন, প্রতিষ্ঠানপ্রধানের নির্দেশে এগুলো মোছা হচ্ছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদসহ বিভিন্ন দাবিতে গত শনিবার দেয়াললিখন ও গ্রাফিতি অঙ্কন কর্মসূচির ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার থেকে এই বিদ্যালয়ের দেয়ালসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা দেয়াললিখন ও গ্রাফিতি অঙ্কন করেন।

এরও আগে ১৯ জুলাই দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে ও আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী নিজ বিদ্যালয়ের দেয়ালে নানা স্লোগান লিখে প্রতিবাদ জানান। ‘বুকের ভেতর দারুণ ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’, ‘দমায় রাখতে পারেনি, পারবে না’, ‘বিদ্যালাভে লোকসান, নাহি অর্থ নাহি মান, হীরক রাজা বুদ্ধিমান’, ‘রক্তের দাম চাই’সহ ১৯ জুলাইয়ের লেখার পাশাপাশি এদিন গত দুই–তিন দিনে আঁকা গ্রাফিতিগুলোও মুছে ফেলতে দেখা যায়।

ওই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করা কয়েকজন পথচারী প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে ৮-১০ জন তরুণী বিদ্যালয়ের দেয়ালে ‘আমার ভাই মরলো কেন?’ ‘দিনে আটক, রাতে নাটক’, ‘গুলি করে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’সহ বিভিন্ন স্লোগানের পাশাপাশি দেয়ালচিত্র আঁকতে শুরু করেন। এর কিছু সময়ের মধ্যে সাদাপোশাকে আসা পুলিশের এক সদস্য সেখানে দেয়ালের ছবি তোলেন। সে সময় কয়েকজন তরুণী পাশে লুকিয়ে যান। একটু অপেক্ষার পর মোটরসাইকেলে আসা পুলিশের আরেক সদস্য তাঁকে নিয়ে যান। পরে ওই তরুণীরা আবারও সেখানে এসে কিছু সময় আঁকাআঁকি করেন। এরই মধ্যে বেলা ১১টার দিকে পুলিশের একটি গাড়ি সেখানে আসে। তবে তারই আগে দেয়ালচিত্র আঁকা ও লেখা তরুণীরা ওই এলাকা ত্যাগ করেন।

বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দেয়ালে লেখা ও আঁকা মুছে ফেলতে দেখা যায় ৮-১০ জনকে।
ছবি: প্রথম আলো

জানতে চাইলে বাগেরহাট সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইদুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার জানা নেই।’

এদিকে পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় দুই বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, দুপুরের পর ডিএসবির (জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার) পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি তাঁর মুঠোফোনে থাকা লেখা ও আঁকায় অংশ নেওয়া মেয়েশিক্ষার্থীদের ছবি দেখিয়ে তাঁদের পরিচয় জানতে চেয়েছেন। চলমান পরিস্থিতিতে ওই তরুণীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথাও জানান তাঁরা।

দেয়ালে লেখা-আঁকা মুছতে থাকা ব্যক্তিদের একজন নিজেকে বালিকা বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী পরিচয় দেওয়া মো. তহিদুল ইসলাম। দেয়াললিখন ও গ্রাফিতি মোছার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তো আমার প্রতিষ্ঠানপ্রধান ভালো জানেন। তিনি আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন ওয়ালের লেখনী মুছতে।’

এখানে কী লেখা হয়েছিল, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেখতেছেনই তো। প্রতিষ্ঠানপ্রধান সিদ্ধান্ত নিলে আসলে আমাদের কিছু করার থাকে না।’

জানতে চাইলে বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমতা রানী বিশ্বাস বলেন, ‘দেয়ালে যেকোনো কিছু লেখাই নিষেধ। অনেক আগে থেকেই বারণ।’ একুশে ফেব্রুয়ারিসহ বিভিন্ন সময়ে সেখানকার দেয়ালে যে লেখা হয়—এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘এখানে কেবল রাস্তায় আলপনা হয়, দেয়ালে লেখা হয় না।’

‘দেয়াল লেখা নিষেধ’ এমন কোনো লিখিত নোটিশ আছে কি না, জানতে চাইলে মতা রানী বিশ্বাস বলেন, ‘না, মুখে মুখে বলে দিছি। এর আগে ওইভাবে কোনো দিন তদারকি করিনি। দেয়াল লেখা থাকলে দেয়ালটা অপরিষ্কার দেখায়, সে জন্য তা মুছে দেওয়া হচ্ছে।’