টাঙ্গাইলে তিন মামলায় সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

সাবেক কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাকে টাঙ্গাইল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। দুটি হত্যা মামলাসহ তিনটি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সোমবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইলে দুটি হত্যা মামলাসহ তিনটি মামলায় সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পরে ওই তিন মামলায় তাঁকে পাঁচ দিন করে মোট ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

আব্দুর রাজ্জাককে আজ সোমবার টাঙ্গাইল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হবে, এ খবর পাওয়ার পর সকাল থেকেই বিএনপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জামায়াতে ইসলামী ও গণ অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা আদালত এলাকায় অবস্থান নেন। তাঁরা আদালতে প্রবেশের বিভিন্ন পথে অবস্থান করতে থাকেন। বিভিন্ন সময় মিছিলও বের করেন। বেলা ৩টা ২০ মিনিটে আব্দুর রাজ্জাককে বহনকারী প্রিজন ভ্যান কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালত এলাকায় প্রবেশ করে। বিক্ষোভকারীরা এ সময় ওই ভ্যান ঘিরে আব্দুর রাজ্জাকের বিচারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁরা আব্দুর রাজ্জাকের দিকে ডিম ছুড়ে মারেন।

ওই তিন মামলার মধ্যে রয়েছে ৪ আগস্ট মধুপুর উপজেলা সদরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার মামলা, ৪ আগস্ট মির্জাপুরের গোড়াই এলাকায় ছাত্র-জনতার মিছিলে কলেজছাত্র ইমন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত এবং ৫ আগস্ট টাঙ্গাইল শহরে ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিলে স্কুলছাত্র মারুফ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতের ঘটনায় করা মামলা।

আদালত সূত্র জানায়, ৪ আগস্ট মধুপুর উপজেলা সদরে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর মো. জাহিদ হাসান বাদী হয়ে মধুপুর আমলি আদালতে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আব্দুর রাজ্জাককে প্রধান আসামি করা হয়। আদালত মামলাটি গ্রহণের জন্য মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন।

ওই মামলার রিমান্ড শুনানির জন্য আব্দুর রাজ্জাককে আজ প্রথমে মধুপুর আমলি আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ওই আদালতের বিচারক অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল মোহসীন তাঁর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এরপর টাঙ্গাইল সদর আমলি আদালতে হাজির করা হয় আব্দুর রাজ্জাককে। ওই আদালত সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট টাঙ্গাইল শহরের মেইন রোডে ছাত্র-জনতা বিজয় মিছিল বের করেন। ওই মিছিলে হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে স্কুলছাত্র মারুফ নিহত হন। এ ঘটনায় নিহত মারুফের মা মোর্শেদা বাদী হয়ে গত ১৮ আগস্ট টাঙ্গাইল সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে আব্দুর রাজ্জাককে প্রধান আসামি করা হয়। মারুফ হত্যা মামলায় আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেপ্তার দেখানো এবং ওই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ওই আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পশুপতি বিশ্বাস আব্দুর রাজ্জাকের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

শেষে আব্দুর রাজ্জাককে মির্জাপুর আমলি আদালতে হাজির করা হয়। ওই আদালত সূত্র জানায়, গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে মির্জাপুরের গোড়াই এলাকায় ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে কলেজছাত্র ইমন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ আগস্ট ইমন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনায় ইমনের ভাই সুমন বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় গত ১৯ আগস্ট হত্যা মামলা করেন। এতে আব্দুর রাজ্জাককে প্রধান আসামি করা হয়।

ইমন হত্যা মামলায় রাজ্জাককে গ্রেপ্তার দেখানো এবং ওই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে বিচারক ইসমত আরা ইমন হত্যা মামলায় আব্দুর রাজ্জাকের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আব্দুর রাজ্জাকের পক্ষে টাঙ্গাইল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ কে এম শামীমুল আক্তারসহ প্রায় ২৫ জন আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেন। তাঁরা আব্দুর রাজ্জাকের জামিন প্রার্থনা করেন। অপর দিকে টাঙ্গাইলের নবনিযুক্ত পিপি শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাকের জামিনের বিরোধিতা করেন। আব্দুর রাজ্জাককে আদালত থেকে নিয়ে যাওয়ার সময়ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়।

টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি তানভীর আহম্মেদ জানান, প্রথমে টাঙ্গাইল সদর থানার মামলায় (স্কুলছাত্র মারুফ হত্যা মামলা) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আব্দুর রাজ্জাককে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হবে।