জুড়ী নদীর বাঁধের তিন স্থানে ভাঙন, নতুন করে চারটি গ্রাম প্লাবিত

জুড়ী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের প্রায় ৫০ ফুট জায়গা ভেঙে গেছে। ভাঙনকবলিত স্থান দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলের তোড়ে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় জুড়ী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের তিনটি স্থান ভেঙে পড়েছে। এতে নতুন করে চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বৃষ্টি না হলেও উপজেলায় বন্যার পানি কমেনি। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক আজ দুপুরে বন্যাকবলিত কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেন।

সরেজমিন আজ বিকেলের দিকে দেখা যায়, পাহাড়ি ঢলে জায়ফরনগর ইউনিয়নের গৌরীপুর এলাকায় জুড়ী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের প্রায় ৫০ ফুট জায়গা ভেঙে গেছে। ভাঙনকবলিত ওই স্থান দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করছে। এতে গৌরীপুর, আঞ্জুরিকোনা, নামা মনতৈল ও ভবানীপুর গ্রাম প্লাবিত হয়ে গেছে। বিকেলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কিশোর রায় চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ ও জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য কামরুল হাসান ভাঙনকবলিত স্থান পরিদর্শনে যান।

আরও পড়ুন

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং বলেন, এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসন থেকে ত্রাণ হিসেবে ৬০ মেট্রিক টন চাল ও ৫০ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। আগামীকাল শুক্রবার থেকে চাল বিতরণ শুরু হবে।

বাড়িতে পানি বাড়ায় মালামাল নিয়ে নৌকায় করে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন জাহানারা খাতুন। বৃহস্পতিবার বিকেলে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার উত্তর জাঙ্গিরাই এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

এলাকাবাসী বলেন, কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার জায়ফরনগর, পশ্চিম জুড়ী, সাগরনাল, পূর্ব জুড়ী ও গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা দেখা দেয়। গতকাল বুধবার রাতে পাহাড়ি ঢলে জায়ফরনগর ইউনিয়নের গৌরীপুর এলাকায় জুড়ী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের প্রায় ৫০ ফুট জায়গা ভেঙে যায়। এ ছাড়া সাগরনাল ইউনিয়নের কাশিনগর ও বরইতলি গ্রামে বাঁধের আরও দুটি স্থান ভেঙে পড়ে। জুড়ী-লাঠিটিলা সড়কের উত্তর ভবানীপুর এলাকা তিন থেকে চার ফুট পানিতে তলিয়ে রয়েছে। জুড়ী-বড়লেখা সড়কের বাছিরপুর এলাকায়ও একই অবস্থা। ঝুঁকি নিয়ে দুটি সড়কে বিভিন্ন ধরনের যান চলাচল করছে।

আরও পড়ুন

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কিশোর রায় চৌধুরী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীকে ভাঙনের কথা জানানো হয়েছে। তিনি এসব স্থান পরিদর্শন করবেন। পানি কমে গেলে জরুরি ভিত্তিতে এসব স্থান মেরামত করতে হবে। কিশোর রায় চৌধুরী আরও বলেন, আজ সকাল থেকে বৃষ্টি হয়নি। এরপরও বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বন্যায় ছয়টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো মানুষের বাড়িঘর ও সড়ক থেকে পানি নামেনি। তিনি এলাকার প্রবাসী ও বিত্তবান মানুষকে বন্যার্ত ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ডুবে গেছে সড়ক। ঝুঁকি নিয়ে চলছে বিভিন্ন ধরনের যান। বৃহস্পতিবার দুপুরে জুড়ী-লাঠিটিলা সড়কের উত্তর ভবানীপুর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক উর্মি বিনতে সালাম দুপুরের দিকে জায়ফরনগর ইউনিয়নের বন্যাকবলিত কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি জুড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও মক্তদীর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে দুর্গত মানুষের মধ্যে শুকনা খাবারের প্যাকেট বিতরণ করেন। এ সময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহিনা আক্তার, ইউএনও লুসিকান্ত হাজং, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সানজিদা আক্তার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

ত্রাণ বিতরণ শেষে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক উর্মি বিনতে সালাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি আজ বন্যাকবলিত জুড়ী ও কুলাউড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছেন। জেলা প্রশাসন দুর্গত মানুষের পাশে রয়েছে। দুর্গত মানুষকে চাল, শুকনা খাবার, খাওয়ার স্যালাইন, ওষুধ, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হলে বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাবে বলে তিনি আশা করেন।