একসঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন মা–মেয়ে
দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিয়ে হয়ে যায় তাঁর। কিন্তু লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল তাঁর। এরপর কেটে যায় ১৭টি বছর। একে একে চার সন্তানের মা হন। সন্তানেরা বড় হওয়ার পর আবার লেখাপড়া শুরু করেন। ইচ্ছা থাকলে যে উপায় হয়, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তিনি। সেই ইচ্ছার জোরেই ২০২০ সালে দাখিল পরীক্ষা দেন, পাসও করেন। এবার মেয়ের সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন তিনি।
এই অধ্যবসায়ী গৃহবধূর নাম মারুফা আক্তার। ৩৫ বছর বয়সে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তিনি নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সরকারি কলেজের বিএম শাখার ছাত্রী। তাঁর মেয়ের নাম শাহী সিদ্দিকা। তিনি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। এর আগে দাখিল পরীক্ষায় মা মারুফা আক্তার জিপিএ ৪ দশমিক ৬০ পেয়ে পাস করেছিলেন। আর মেয়ে শাহী সিদ্দিকা এসএসসি পরীক্ষায় পেয়েছিলেন জিপিএ ৩।
মারুফা আক্তার নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের পুন্যারঝার গ্রামের সাইদুল ইসলামের স্ত্রী। সাইদুল পেশায় একজন মাছ ব্যবসায়ী। তাঁদের দুই ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে মেয়ে শাহী সিদ্দিকা সবার বড়। দ্বিতীয় সন্তান এবার দশম শ্রেণির ছাত্র। তৃতীয় সন্তান অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী এবং সবার ছোট ছেলে পড়ছে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মারুফা আক্তার বলেন, ‘২০০৩ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলাম। পড়াশোনার প্রতি আমার আগ্রহ থাকলেও পরীক্ষার আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর চার ছেলেমেয়েকে মানুষ করতে গিয়ে নিজের পড়ার কথা আর ভাবার সময় হয়নি। পরে নিজের ইচ্ছা এবং স্বামী ও সন্তানদের অনুপ্রেরণায় ছোটখাতা ফাজিল মাদ্রাসায় নবম শ্রেণিতে ভর্তি হই। সেবার মেয়েও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এরপর ২০২০ সালে মা-মেয়ে একই সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হই। এবারও ভালো ফলাফলে আশাবাদী আমরা।’
পড়ালেখা করে অনেক দূরে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে মারুফা আক্তার আরও বলেন,‘এইচএসসি পাস করে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে আমার, যাতে সমাজে আর দশজনের মতো করে নিজেকে একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে পারি। সেভাবে সন্তানদেরকেও এগিয়ে নিচ্ছি। এজন্যই কষ্ট করে হলেও লেখাপড়াটা আবারও শুরু করেছি।’
মায়ের পড়ালেখার প্রতি এমন আগ্রহের বিষয়ে মেয়ে শাহী সিদ্দিকা বলেন, ‘ভাবতে খুব ভালো লাগছে, আমরা মা-মেয়ে একই সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছি। এমন সুযোগ আর কয়জনার ভাগ্যে আসে।’
মারুফা আক্তারের স্বামী সাইদুল ইসলাম (৪০) বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীর ইচ্ছার মর্যাদা দিয়েছি। সে যত দূর পড়তে চায়, আমি সহযোগিতা করব।’
ডিমলা উপজেলার শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান বলেন,‘ইচ্ছাশক্তি থাকলে লেখাপড়ায় বয়স কোনো বাধা নয়। মারুফা আক্তারের এমন উদ্যোগ অনেককে অনুপ্রাণিত করবে। দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে সমাজে। আমরা ওই মা-মেয়ের সাফল্য কামনা করি।’