পাবনায় বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে সংঘর্ষ, থানায় এক পক্ষের অভিযোগ
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় এক পক্ষ থানায় অভিযোগ দিয়েছে। আজ রোববার নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব সালাউদ্দিন খানের পক্ষে থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়।
উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, আগামী সংসদ নির্বাচনে পাবনা-১ (সাঁথিয়া ও বেড়ার একাংশ) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক শামসুর রহমান ও সদস্যসচিব সালাউদ্দিন খান। আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকেই তাঁরা বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেতে নানা তৎপরতা চালিয়ে আসছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাঁরা দলীয় মনোনয়নের জন্য আরও বেশি তৎপর হয়ে উঠেছেন। এ অবস্থায় উপজেলা আহ্বায়ক কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার জন্য তাঁরা দুজনেই আপ্রাণ চেষ্টা ও তদবির চালিয়ে আসছিলেন। দুজনেই চাইছিলেন আহ্বায়ক হতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১৪ নভেম্বর রাতে পাবনা জেলা বিএনপি খাইরুন নাহার খানমকে আহ্বায়ক ও সালাহউদ্দিন খানকে সদস্যসচিব করে ২৪ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এ কমিটিতে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমানকে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়।
আহ্বায়ক হতে না পারলেও সদস্যসচিব হওয়ায় সালাউদ্দিন খান কমিটি মেনে নেন। কিন্তু শামসুর রহমান ও তাঁর সমর্থকেরা বিষয়টিকে না মেনে এ কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁদের দাবি, ত্যাগী নেতাকে মূল্যায়ন না করে টাকার বিনিময়ে ও মারাত্মক অনিয়মের মাধ্যমে কমিটি করা হয়েছে। এ কারণেই গত শুক্রবার ও শনিবার শামসুর রহমানের সমর্থকেরা কমিটি বাতিলের দাবিতে ঝাড়ুমিছিলসহ বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
অন্যদিকে নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক খাইরুন নাহার খানম ও সদস্যসচিব সালাউদ্দিন খানের নেতৃত্বে তাঁদের সমর্থকেরা গতকাল শনিবার বিকেলে নবগঠিত কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে আনন্দ মিছিল করেন। এ সময় সাঁথিয়ার বোয়ালমারী বাজারে দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে ব্যাপক সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হন। সংঘর্ষের পর এলাকায় সেনাবাহিনী, পুলিশসহ অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের পর থেকে পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক রয়েছে।
এরই মধ্যে সালাউদ্দিন খানের পক্ষ থেকে করমজা গ্রামের আমির হোসেন নামের এক ব্যক্তি সাঁথিয়া থানায় হামলা, বাড়িঘরে ভাঙচুর, মারধর ও কুপিয়ে আহত করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে সাঁথিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে শামসুর রহমানের পক্ষের ৬০ থেকে ৭০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে শামসুর রহমানের পক্ষ থেকে এখনো থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের না হলেও তাঁদের পক্ষ থেকেও মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
শামসুর রহমান বলেন, ‘আমার পক্ষের ১৫ জন নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হয়ে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ জন্য আমি আহতদের দেখতে ঢাকায় আছি। ঢাকা থেকে ফিরে আগামীকাল সোমবার থানায় মামলা দায়েরের উদ্যোগ নেব।’
শামসুর রহমান বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে দল ত্যাগী ও পরীক্ষিত কাউকে মনোনয়ন দিলে তিনি তা মেনে নেবেন ও তাঁর পক্ষে কাজ করবেন। কিন্তু ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’ অথবা ‘অতিথি পাখি’ কাউকে দলের গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদ দেওয়া হলে তা মেনে নেওয়া হবে না।
সালাউদ্দিন খান বলেন, তিনিও পাবনা-১ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। শনিবারের সংঘর্ষের ঘটনার পেছনে দলীয় মনোনয়ন কে পাবে বা না পাবে, তা ভূমিকা রাখবে না। মূলত কমিটির পদকে কেন্দ্র করেই শামসুর রহমান ও তাঁর সমর্থকেরা নানা উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড চালানোয় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি দাবি করেন, শামসুর রহমানের লোকজনই আনন্দমিছিলে অংশ নেওয়া তাঁদের সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। সালাউদ্দিন খান বলেন, নতুন কমিটিতে আহ্বায়ক, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের সমান ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তিনজনের যৌথ স্বাক্ষরে যেকোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। অথচ জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পাওয়ার পরও শামসুর রহমান বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছেন।
সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুর রহমান বলেন, ‘থানায় এক পক্ষের একটি অভিযোগ পেয়েছি। সেটি মামলা হিসেবে গ্রহণের জন্য প্রক্রিয়াধীন। তবে শামসুর রহমানের পক্ষ থেকে এখনো আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। আর এলাকায় শান্তি বজায় রাখার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের মাধ্যমে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে।’