ক্রসিংয়ে নেই কোনো গেট, রেললাইনে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসটি খাদে
ফরিদপুরে ট্রেন ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে দম্পতিসহ যে পাঁচজন নিহত হয়েছেন, তাঁদের পরিচয় পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তিরা সবাই নিকটাত্মীয়। তাঁদের মধ্যে তিনজন ঘটনাস্থলে মারা গেছেন। বাকি দুজনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
আজ মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ফরিদপুর সদরের গেরদা এলাকায় রাজবাড়ী-ভাঙ্গা রেলপথের মুন্সিবাজার ক্রসিংয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন নারায়ণগঞ্জের ভূঁইয়াপাড়ার বাসিন্দা মামুন চৌধুরী ওরফে লিটন (৫০), তাঁর স্ত্রী ফাহমিদা শারমীন ওরফে মুন (৪০), একই এলাকার মো. হাসিব জহিরের স্ত্রী সাজিয়া সাজু (৪৫), মো. সাইদ ভূঁইয়ার স্ত্রী আতিফা রহমান (৩৬) ও নারায়ণগঞ্জের দড়িমোল্লাকান্দার বাসিন্দা মো. আলমগীর হোসেনের স্ত্রী উম্মে তানসুমা রিনতু (৩০)।
নিহত মামুন চৌধুরীর ভায়রা মো. সালাউদ্দিন জানান, নিহত ব্যক্তিরা সবাই নিকটাত্মীয়। তাঁরা ফরিদপুর সদরের গেরদা এলাকায় ঘোরার পর নারায়ণগঞ্জে ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন।
যেভাবে দুর্ঘটনা ঘটল
সরেজমিনে দেখা যায়, মুন্সিবাজার রেলক্রসিং–সংলগ্ন রাস্তার দুই পাশে বেশ কয়েকটি দোকান ও গাছ আছে। গেরদার দিক থেকে মুন্সিবাজারের দিকে সড়কটি সোজাসুজি চলে গেছে। তবে দুই পাশে দোকান থাকায় হুইসেল না দেওয়ায় ট্রেন আসা যাওয়ার বিষয়টি বোঝা যায় না সেভাবে।
প্রত্যক্ষদর্শী কাফুরা এলাকার বাসিন্দা আবু নাইম (৩৯) প্রথম আলোকে বলেন, মাইক্রোবাসটি মুন্সিবাজারের দিকে যাচ্ছিল। এটি রেললাইনে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ট্রেন ওই মাই সামনের দিকে প্রায় এক শ গজ ঠেলে নিয়ে যায়। পরে রেললাইনের পাশে একটি পিলারে ধাক্কা খেয়ে গাড়িটি পূর্ব দিকে একটি খাদে পড়ে যায়।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী শেখ জাফর (৫৪) বলেন, এই রেলক্রসিংটি অরক্ষিত। এখানে কোনো গেট নেই। দোকানের কারণে হুইসেল না দিলে ট্রেন আসছে কি না বোঝা যায় না। ট্রেনটি গেট পার হওয়ার আগে কোনো হুইসেল দেয়নি। তবে দুর্ঘটনার পর হুইসেল দিয়েছে।
মুন্সিবাজার এলাকার বাসিন্দা মো. সরোয়ার (৫৯) বলেন, এই রেলক্রসিং এ মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। এই সড়কটিও গুরুত্বপূর্ণ। চরভদ্রাসন ও সদরপুর বাসস্ট্যান্ডে যেতে এ সড়কটি ব্যবহার করা হয়। এই রেলক্রসিংয়ে গেট থাকলে ও গেটম্যান থাকলে দুর্ঘটনাটি ঘটত না।
স্থানীয় লোকজন জানান, মধুমতী এক্সপ্রেস নামের ট্রেনটি রাজশাহী থেকে ফরিদপুর হয়ে ঢাকা যাচ্ছিল। অপরদিকে ওই মাইক্রোবাসটি গেরদা থেকে মুন্সিবাজারের দিক আসছিল। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, দুপুর ১২টা ২৮ মিনিটে খবর পেয়ে তাঁরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি মৃতদেহ উদ্ধার করেন তাঁরা। ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মাইক্রোবাসটি নিচের খাদে পড়ে গিয়েছিল। সেটি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এটির ভেতরে কিংবা নিচে চাপা পড়া অবস্থায় কোনো মৃতদেহ পাওয়া যায়নি।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডমাস্টার আতিয়ার রহমান বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা দুজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। তাঁর দুজন নারী। বাকিদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে মাইক্রোবাসের চালকও আছেন।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্লা ও পুলিশ সুপার মো. আবদুল জলিল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জেলা প্রশাসক বলেন, নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ বহন ও দাফনের জন্য যাবতীয় খরচ বহন করবে জেলা প্রশাসন।
ফরিদপুর রেলের স্টেশনমাস্টার তাকদির হোসেন বলেন, মুন্সিবাজার রেলক্রসিং রেল বিভাগের অনুমোদিত নয়। তবে এ ক্রসিংটি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে গেট ও গেটম্যান দেওয়ার জন্য তিনি রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ জানাবেন। তিনি বলেন, ওই রেলক্রসিংটি রেলওয়ে অনুমোদন দিলে এ–জাতীয় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
রেলওয়ে রাজবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিক মো. সিদ্দিকুর ইসলাম বলেন, নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশগুলো পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে রাজবাড়ী রেলওয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে।