গোপালগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ব্রোঞ্জের গয়না স্বীকৃতি পেল জিআই পণ্যের

গোপালগঞ্জের দ্বিতীয় পণ্য হিসেবে ভৌগোলিক নির্দেশকের স্বীকৃতি পেয়েছে ব্রোঞ্জের গয়নাছবি: সংগৃহীত

গোপালগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ব্রোঞ্জের গয়না ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। এটি জেলার দ্বিতীয় পণ্য হিসেবে ভৌগোলিক নির্দেশকের স্বীকৃতি অর্জন করল। এর আগে গোপালগঞ্জের রসগোল্লা জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছিল।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, গত ১২ মার্চ মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জের গয়নার জিআই পণ্যের স্বীকৃতি চেয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট শিল্প মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোতে আবেদন করা হয়। পরে যাচাই–বাছাই করে বৃহস্পতিবার জিআই পণ্য হিসেবে ব্রোঞ্জের গয়না নিবন্ধনের জন্য ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন, ২০১৩–এর ধারা ১২ অনুসারে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর কর্তৃক জার্নাল প্রকাশ করা হয়।

কাজী মাহবুবুল আলম আরও বলেন, এই স্বীকৃতিতে জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জের গয়নার ঐতিহ্যকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। এ ছাড়া ব্রোঞ্জের গয়না তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত কারিগরদের কর্মসংস্থান ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়ক হবে। ব্রোঞ্জশিল্পভিত্তিক অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে। এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।

এ অর্জনে জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম গোপালগঞ্জের ব্রোঞ্জের গয়নার জিআই–ভুক্তিকরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত জেলা প্রশাসন ও মুকসুদপুর উপজেলা প্রশাসনের সব কর্মকর্তা এবং ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের (ইডিসি) কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে তাঁদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

ব্রোঞ্জ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও জলিরপাড় ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য সুভাষ বৈদ্য বলেন, ‘আমাদের ওয়ার্ডেই ব্রোঞ্জের গয়না তৈরির পল্লি প্রায় ১০০ বছর আগে গড়ে ওঠে। পরে এটি সারা জলিরপাড় ইউনিয়নের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। এ পল্লিকে কেন্দ্র করে এখানে ব্রোঞ্জ মার্কেট প্রতিষ্ঠিত হয়। জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জের গয়নার সুখ্যাতি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। দেশের গণ্ডি পেড়িয়ে এটি বিদেশের বাজারে ছড়িয়ে যায়। কিন্তু এ শিল্পে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। তাই সম্প্রতি ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ব্রোঞ্জের গয়না আমাদের বাজারের প্রায় ৫০ ভাগ দখল করে দিয়েছে। তারপরও জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জের গয়না তৈরি শিল্প সগৌরবে শতাধিক পরিবার টিকিয়ে রেখেছে। জলিরপাড় ব্রোঞ্জ মার্কেটে এখনো ৪৫টি দোকান রয়েছে। এসব দোকানে এখনো ব্রোঞ্জের গয়না বিক্রি করা হয়।’

ব্রোঞ্জের গয়না প্রস্তুতকারক জলিরপাড় গ্রামের জগদীশ শীল বলেন, ‘ব্রোঞ্জের গয়না তৈরির তামা, দস্তা ও পিতলের দাম বেড়েছে। সহজপ্রাপ্যতা কমেছে। ভারতসহ অন্যান্য দেশের ব্রোঞ্জ গয়নার রং খুব চকচকে। আমাদের গয়নার রং তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না। দামি, সুদৃশ্য, মনোহর ও শৌখিন গয়নার বাজার ভারত ও চীনের দখলে চলে গেছে। তাই কানের দুল, হাতের বয়লাসহ যেসব গয়নার চাহিদা রয়েছে, এমন সব গয়না আমরা তৈরি করি। সরকার এ শিল্পকে আধুনিকায়ন, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও সব ধরনের সহযোগিতা করলে আমরা ব্রোঞ্জ গয়নার শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারব। এখানে এখনো মানসম্পন্ন কারিগর রয়েছেন। আধুনিক যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে তাঁদের কাজে লাগিয়ে আমরাও দামি গয়না তৈরি করতে পারি। তা হলেই শ্রমিক, মালিক ও ব্যবসায়ীরা অধিক উপার্জন করতে পারবেন। এ শিল্প দেশের অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ ও গতিশীল করবে।’