শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল নীতিমালা প্রণয়নসংক্রান্ত একটি বৈঠকে অংশীজনদের আমন্ত্রণ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সমালোচনার মুখে পড়েছে প্রশাসন। তবে কর্তৃপক্ষ এটিকে উন্মুক্ত আলোচনা সভা দাবি করে যেকোনো শিক্ষার্থী বা প্রতিনিধিকে আসার নিমন্ত্রণ জানিয়েছে। আজ বুধবার দুপুর ১২টায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, বৈঠকের বিষয়টি উল্লেখ করে দপ্তরপ্রধান, হল প্রাধ্যক্ষ, বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন, একটি ফেসবুক পেজের প্রতিনিধিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২ জন অংশীজনের কাছে এ–সংক্রান্ত একটি চিঠি বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে চিঠিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। মুহূর্তেই তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় নানা আলোচনা–সমালোচনা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, চিঠিতে উল্লেখিত অংশীজনের কেউ কেউ দাওয়াতও পাননি, অথচ অংশীজন হিসেবে সংগঠনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া শাবিপ্রবিকে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে হাস্যরসাত্মক ও ব্যঙ্গাত্মক ভিডিও ক্লিপ বানানো ফেসবুক পেজের প্রতিনিধি, ছাত্রী হলের প্রতিনিধি থাকতে বলা হলেও ছাত্র হলের কোনো প্রতিনিধি না ডাকা, দলীয় ব্যানারে রাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রাজনৈতিক সংগঠনকে ডাকা, একটি হলের প্রাধ্যক্ষকে দাওয়াত না দেওয়া, সাধারণ শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নিয়ে ধোঁয়াশা, অপ্রকাশিত একটি সংগঠনকে দাওয়াত দেওয়াসহ নানা বিষয়ে প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে প্রক্টর মো. মোখলেসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রক্টরীয় নীতিমালাসংক্রান্ত বৈঠকটির পদ্ধতিগত দিকে সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য সৎ। যেকোনো শিক্ষার্থী আমাদের বৈঠকে আসতে পারে। আমরা মূলত প্রক্টরীয় কমিটির বর্তমান নীতিমালা নিয়ে আলোচনা করব। এ বিষয়ে একটি উন্মুক্ত আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।’
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি চিঠিতে দেখা যায়, চিঠিটি গতকাল বিতরণের জন্য ইস্যু করা হয়েছে। এতে স্বাক্ষর করেছেন প্রক্টরিয়াল কমিটির সদস্যসচিব ও প্রক্টর মোখলেসুর রহমান। ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক, পাঁচজন হল প্রাধ্যক্ষ, দুজন সহকারী প্রক্টর, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠন (একসঙ্গে), তিনটি ছাত্রী হল, সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দুজন করে প্রতিনিধিকে বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া তাবলিগ, বাম ছাত্রসংগঠন, সনাতনী বিদ্যার্থী সংসদ, শাবিপ্রবি প্রেসক্লাব, অপ্রকাশিত একটি সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব সোসিয়েশন্স’ ও ‘সাস্ট ইনসাইডারর্স’ নামক একটি ফেসবুকভিত্তিক পেজের একজন প্রতিনিধিকে বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।’
বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে পোস্ট দিয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। শাবিপ্রবির থিয়েটার সাস্টের সভাপতি পলাশ বখতিয়ার ‘সাস্টিয়ান ভয়েস’ নামক শিক্ষার্থীদের একটি গ্রুপে লিখেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে এতগুলো সংগঠন, তাদের মধ্যে থেকে দুজন প্রতিনিধি কারা যাবে? কেই–বা ঠিক করে দেবে? নাকি ঠিক হয়ে গেছে? প্রক্টরিয়াল নিয়মনীতি প্রণয়নের এমন গুরুত্বপূর্ণ সভা নিয়ে এত তাড়াহুড়ো কেন?’
পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী শাকিল হাসান তাঁর পোস্টে লিখেছেন, ‘সত্যিই ছাত্রদের থেকে ছাত্রপ্রতিনিধি যাবে, নাকি কারও সিলেকশন করা ছাত্রকে নিয়ে সেখানে বসিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীর প্রতিনিধি বলে চালিয়ে দেওয়া হবে।’
জোবায়ের আলম নামের অর্থনীতি বিভাগের এক শিক্ষার্থী কয়েকটি প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘সৈয়দ মুজতবা আলী হলের প্রভোস্ট কেউ নেই? তিন ছাত্রী হল থেকে ছয়জন প্রতিনিধি গেলে তিন ছাত্র হল থেকে ছয়জন নয় কেন? সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দুজন প্রতিনিধি কারা বা কীভাবে নির্বাচন করা হবে এক দিনের মধ্যে? বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দিয়ে মিমস বানাইলেও নীতিনির্ধারকদের কাতারে যাওয়া যায়?’