বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের সময়সীমা বেঁধে দিল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এক পক্ষ বিক্ষোভ করেছেন। আজ বুধবার সন্ধ্যায়ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শুচিতা শরমিনের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ। আজ বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার মধ্যে পদত্যাগের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে।

এর আগে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অংশের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে যোগদান করতে এসেও ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন নতুন নিয়োগ পাওয়া কোষাধ্যক্ষ কর্নেল (অব.) আবু হেনা মোস্তফা কামাল খান। তাঁকে ‘স্বৈরাচারের দোসর’ আখ্যা দিয়ে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তাঁরা।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে আবু হেনা মোস্তফা কামাল যোগদান করতে এলে রাত ৯টার দিকে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তিনি যোগদান না করেই ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। তাঁর নিয়োগের প্রতিবাদে আজও ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ হয়েছে। এর জের ধরেই সন্ধ্যায় উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি উঠল।

শিক্ষার্থীরা জানান, আবু হেনা মোস্তফা কামালকে যোগদান করাতে উপাচার্য সহযোগিতা করেন। এসব বিষয়ে আজ বিকেলে তাঁরা একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। সভায় উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে উপনীত হন তাঁরা। এরপর এই দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়। সেখানে উপাচার্যের পদত্যাগের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

উপাচার্যের বিরুদ্ধে জুলাই বিপ্লবের চেতনা ধারণ না করা এবং বারবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে বিতর্কিত আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসনের অভিযোগ তুলেছেন বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বেশ কয়েকজন শিক্ষককেও অংশ নিতে দেখা যায়।

বিক্ষোভে সংহতি প্রকাশ করা লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সিরাজিস সাদিক বলেন, ‘খুবই দুঃখজনক যে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পতিত স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্টদের দোসরদের পক্ষের শক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনমতকে তোয়াক্কা না করে বিভিন্নভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থবিরতা তৈরি করেছে। উদ্বেগজনকভাবে এটা লক্ষ করা যাচ্ছে যে বর্তমান প্রশাসন গভীর রাতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানসংবলিত নির্দেশনা জারি করে তা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে অবহিত। বিষয়টি নিন্দনীয় বলে মনে করি বলে আমরা শিক্ষকেরা আন্দোলনে শরিক হয়েছি।’

কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার বিভাগের চেয়ারম্যান হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, ‘উপাচার্য শুচিতা শরমিন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর ঘনিষ্ঠজন। আবু হেনা মোস্তফা কামাল খানকে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগেও অধ্যাপক কলিমুল্লাহ ও উপাচার্য শুচিতা শরমিনের হাত রয়েছে। অধ্যাপক কলিমুল্লাহ ও আবু হেনা মোস্তফা কামাল ফ্যাসিস্টের সহযোগী এবং নানা কাজে বিতর্কিত। আমরা ৫৩ জন শিক্ষক এবং অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী এতে সংহতি প্রকাশ করেছি। আমরা এই দাবিতে অনড় আছি এবং থাকব।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুচিতা শরমিনের মন্তব্য জানতে তাঁকে বেশ কয়েকবার ফোন দেওয়া হয়, কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০ আগস্ট পদত্যাগ করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া। ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক শুচিতা শরমিনকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করা হয়। তিনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য।