কিশোরীর অনুপ্রবেশ নিয়ে ভারতে ভুয়া খবর, পঞ্চগড়ে পুলিশের সংবাদ সম্মেলন

পঞ্চগড়ের এক কিশোরীর ভারতে অনুপ্রবেশ নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত খবর নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সি। রোববার দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষেছবি: প্রথম আলো

ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে আটক বাংলাদেশি এক কিশোরীকে (১৫) নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর সত্য নয়। আজ রোববার পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সি নিজ কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা বলেন।

পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সি বলেন, বাংলাদেশে ওই কিশোরীকে কেউ কোনো ধরনের হুমকিধমকি দেয়নি। সনাতন ধর্মাবলম্বী ওই কিশোরীর স্বজনেরা আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) সদস্য নন। সে ইসকন করায় তাকে বাংলাদেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত খবর সত্য নয়।

এর আগে গত মঙ্গলবার ভারতের উত্তর দিনাজপুরের ফতেপুর বিওপি দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় ওই কিশোরীকে বিএসএফ আটক করে স্থানীয় থানা–পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পরে আদালতের মাধ্যমে তাকে কোচবিহারের একটি সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। ওই কিশোরী পঞ্চগড় পৌরসভার একটি মহল্লার বাসিন্দা।

ওই কিশোরীকে নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়, ইসকনের ভক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে তাকে ভারতে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও প্রতিবেদনে ওই কিশোরীর কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি।

আজ সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সি বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) বিকেলে আমরা মোবাইলে একটি ভিডিও পাই। ভিডিওতে উল্লেখ আছে, বাংলাদেশি ১৫ বছর বয়সী একটি মেয়ে ভারতে চলে গেছে। সে ইসকন করে বলে তাকে বাংলাদেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে। পরে ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ে আমরা তদন্ত শুরু করি। জানা যায়, তাদের (কিশোরীর পরিবার) সঙ্গে কোনো অন্যায় বা ভয়ভীতি দেখানো হয়নি। মেয়েটি দীর্ঘদিন ধরে চোখের সমস্যায় ভোগায় চিকিৎসার জন্য তাকে ভারতে পাঠানো হয়েছে।’

মিজানুর রহমান মুন্সি বলেন, ‘মেয়েটির মা–বাবার সঙ্গে তিনি নিজে কথা বলেছেন। চোখের সমস্যা থাকায় মেয়েটি বেশি পাওয়ারের (মাত্রা) চশমা পরত। আগেও কয়েকবার ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছে। কিন্তু এখন ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় তাকে অবৈধভাবে ভারতে এক আত্মীয়ের কাছে পাঠিয়েছেন। মেয়েটি মা–বাবা ইসকন করেন না। তাঁরা ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের ওই খবরের নিন্দা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে মেয়েটিকে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা চেয়েছেন।’

পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান আরও বলেন, মেয়েটিকে পাচার করা হয়নি। কোনো ধরনের নির্যাতন বা ভয়ভীতি দেখানোর ঘটনাও ঘটেনি। চিকিৎসার জন্য তাকে অবৈধ পথে ভারতে পাঠান পরিবারের লোকজন। মেয়েটির মায়ের মামার বাড়ি ভারতে। মেয়েটির মা–বাবা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

পুলিশ সুপার বলেন, ‘এখন মেয়েটি ভারতের সেফহোমে আছে বলে জেনেছি। মেয়েটির মা–বাবা আমাদের জানিয়েছেন, মেয়েটির বয়স মাত্র ১৫ হওয়ায় সামাজিক সমস্যার ভয়ে আগে তার বিষয়টি পুলিশকে জানাননি। এখন তাঁদের জিডি করতে বলা হয়েছে। সেই জিডি অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’