নির্যাতনসহ নানা অভিযোগে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ১০ শিক্ষার্থীকে শাস্তি

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ১০ ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এঁদের মধ্যে একজনকে আজীবনের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শিক্ষার্থী নির্যাতনসহ নানা অভিযোগে তাঁদের এই শাস্তি দেওয়া হয়।

আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মির্জ্জা মুহাম্মদ তাইয়েবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শাস্তির আওতায় আসা ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী–সমর্থক বলে কলেজ সূত্র জানিয়েছে।

কলেজের অধ্যক্ষ মির্জ্জা মুহাম্মদ তাইয়েবুল ইসলাম বলেন, গত সোমবার সকালে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী ওই দিনই ১০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

গত সোমবার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত শিক্ষার্থীদের শাস্তিবিষয়ক এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গত ২২ ফেব্রুয়ারি এবং ৯ মার্চ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে ঘটিত অপ্রীতিকর ঘটনা জড়িত ছাত্রদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি অনুমোদিত হয়। এই শাস্তি অবিলম্বে কার্যকর হবে।

শাস্তি পাওয়া ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা হলেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ২৫তম ব্যাচের হৃদয় রঞ্জন নাথ ও আনোয়ার হোসেন; ২৭তম ব্যাচের শহিদুল ইসলাম, জয় সরকার ও  সামিউল হক; ২৮তম ব্যাচের শাইখ আবেদিন, তালুকদার মো. ফারহান ও তাহসিনুল হক; ৩০তম ব্যাচের আফ্রিদি ইসলাম এবং ৩১তম ব্যাচের ইয়াসির জোনায়েদ।  

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ সূত্র জানায়, সাজাপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৫তম ব্যাচের হৃদয় রঞ্জন নাথকে ক্যাম্পাসে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সামিউল হকের দুই বছরের জন্য ইন্টার্ন প্রশিক্ষণ স্থগিত করা হয়েছে। জয় সরকার এবং শাইখ আবেদিনেরও দুই বছরের জন্য ইন্টার্ন প্রশিক্ষণ স্থগিত করা হয়েছে। তালুকদার মো. ফারহান ও তাহসিনুল হকের ২৪ মাস পেশাগত পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখাসহ দুই বছরের জন্য হোস্টেলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে । এ ছাড়া তাঁদের পরবর্তী আচরণ তদারক করা হবে।

এক বছরের জন্য ইন্টার্ন প্রশিক্ষণ স্থগিত হয়েছে আনোয়ার হোসেন এবং শহিদুল ইসলামের। আফ্রিদি ইসলামকে ১২ মাস পেশাগত পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখাসহ দুই বছর হোস্টেলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাঁর পরবর্তী আচরণ তদারক করা হবে। এ ছাড়া শিক্ষার্থী ইয়াসির জোনায়েদকে ছয় মাসের জন্য পেশাগত পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত ও কলেজের হোস্টেলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টায় মেডিকেল কলেজ গেটে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হৃদয় রঞ্জন নাথের নেতৃত্বে ২৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মুজাহিদ ত্বহাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। একই সঙ্গে আরেক শিক্ষার্থী আবদুল মান্নানকেও হেনস্তা করা হয়। পরে তাঁদের শিবিরের নেতা–কর্মী বলে পুলিশে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। এ ঘটনার পর ৩ মার্চ আবদুল মান্নানের মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেওয়া হয়। একই সঙ্গে হাতবোমা দিয়ে মান্নানকে বিস্ফোরক মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়। মোটরসাইকেল ফেরত দেওয়ার জন্য তাঁর কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদাও দাবি করা হয়। এ ছাড়া ৯ মার্চ কলেজ ক্যাম্পাসে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে শাস্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকায় দীর্ঘদিন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বর্তমান পরিস্থিতিতে ঘটনার প্রায় ১০ মাস পর তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।