যুবলীগ নেতাকে গুলি করার অভিযোগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

নোয়াখালী জেলার মানচিত্র

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় ওয়ার্ড যুবলীগের এক নেতাকে তুলে নিয়ে দুই পায়ে গুলি করার অভিযোগ উঠেছে একজন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার দুপুরের দিকে উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নের চেউয়াখালী বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

তবে চেয়ারম্যান বলছেন, যুবলীগের ওই নেতাকে চোর সন্দেহে মারধর করেন স্থানীয় লোকজন। পরে তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

যুবলীগের ওই নেতার নাম মোহাম্মদ হোসেন (৩১)। তাঁকে নোয়াখালীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সহসভাপতি। চরজব্বর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক তাঁকে গুলি করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ওমর ফারুক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
হামলার শিকার মোহাম্মদ হোসেন অভিযোগ করেন বলেন, তিনি পেশায় ট্রাকচালক।

গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি নৌকার প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলামের পক্ষে কাজ করেন ও টাকাপয়সা খরচ করেন। এ নিয়ে ইউপি চেয়াম্যান ওমর ফারুক তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরের দিক চেউয়াখালী বাজারের একটি চায়ের দোকানে চেয়ারম্যান অনুসারী এক যুবকের সঙ্গে তাঁর কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে চেয়ারম্যান ওমর ফারুক ও তাঁর লোকজন ওই চায়ের দোকানে এসে সবার সামনে থেকে তাঁকে অস্ত্রের মুখে প্রাইভেট কারে উঠিয়ে নিয়ে যান। তারপর একটি বাড়িতে নিয়ে তাঁর দুই পায়ে গুলি করেন। পরে স্থানীয় চৌকিদার নুরউদ্দিনকে দিয়ে তাঁকে হাসপাতালে পাঠান চেয়ারম্যান।

চরজব্বর ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক মো. বদিউল আলম অভিযোগ করেন, বর্তমান চেয়ারম্যান আনারস প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চায়ের দোকানে তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে কথা–কাটাকাটি হয় ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলামের অনুসারী যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ হোসেনের। পরে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা হোসেনকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করেন এবং দুই পায়ে গুলি করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চরজব্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, গুলির বিষয়টি ডাহা মিথ্যা। তিনি দাবি করেন, স্থানীয় লোকজন হোসেনকে চোর সন্দেহে ধরে ফেলেন। এরপর তিনি চুরির বিষয়টি স্বীকার করেন। পরে স্থানীয় লোকজন মারধর করে তাঁকে জানান। তিনি চৌকিদারকে বলে হোসেনকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু স্থানীয় সন্ত্রাসী চৌকিদারের কাছ থেকে তাঁকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

আহত মোহাম্মদ হোসেনকে প্রথমে সুবর্ণচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা চিকিৎসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মোহাম্মদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি মারামারির ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ছিল। তবে গুলির বিরুদ্ধে হওয়ার কোনো আলামত তাঁরা পাননি।

২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম বলেন, এক্স–রে না করা পর্যন্ত গুলি করা হয়েছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।

চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেব প্রিয় দাশ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। মারামারির ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে গুলির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।