মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলায় আরসার ২৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার লাম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ (৫০) হত্যার ঘটনায় করা মামলায় ২৯ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
আজ রোববার দুপুরে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এ অভিযোগ গঠন করেন। আসামিদের সবাই মিয়ানমারের সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্য।
আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ফরিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগ গঠনের সময় আদালতে ২৯ আসামির মধ্যে ১৫ জন উপস্থিত ছিলেন। এ মামলার ১৪ জন আসামি পলাতক রয়েছেন। মামলার সাক্ষী ৩৮ জন। আদালত মামলার পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য তারিখ নির্ধারণ করবেন।
অভিযুক্ত ২৯ আসামি হলেন আরসা নেতা ও উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের নুর বশরের ছেলে মোহাম্মদ ছলিম, একই ক্যাম্পের শওকত উল্লাহ, মোহাম্মদ সালাম, জিয়াউর রহমান, মো. ইলিয়াছ, মো. আজিজুল হক, মোর্শেদ ওরফে মুর্শিদ, নুর মোহাম্মদ, আনাস, নজিম উদ্দিন, আবুল কালাম ওরফে আবু, হামিদ হোসেন, সিরাজুল মোস্তফা ওরফে সিরাজুল্লাহ ওরফে সিরাজ, মৌলভি মো. জকোরিয়া, খাইরুল আমিন, মাস্টার আবদুর রহিম ওরফে রকিম, জাহিদ হোসেন ওরফে লালু, ফয়েজ উল্লাহ, ছমির উদ্দিন ওরফে ছমি উদ্দিন ওরফে নুর কামাল, সালেহ আহমদ, মোজাম্মেল ওরফে লাল বদিয়া, তোফাইল, মাস্টার শফি আলম, আবদুস সালাম ওরফে জাকের মুরব্বি, জকির, হাফেজ আয়াছ, মাস্টার কাশিম, মাস্টার শুক্কুর আলম ও মোস্তফা কামাল।
পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার লাম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরের ডি ব্লকের আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) সংগঠনের কার্যালয়ে বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হন মুহিবুল্লাহ। তিনি ওই সংগঠনের চেয়ারম্যান ছিলেন।
পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন। এর ৮ মাস ১৩ দিন পর গত ১৩ জুন কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দেন উখিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গাজী সালাহ উদ্দিন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, আরসার প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার ওরফে জুনুনির নির্দেশে এ সংগঠনের ৩৬ সদস্য পরিকল্পিতভাবে মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করেন।
ঠিকানা শনাক্ত করতে না পারায় সাতজনকে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন আরসার প্রধান জুনুনি, ওস্তাদ খালেদ ওরফে খালিদ, ওস্তাদ হাশিম, ইব্রাহিম, আলমগীর, শুভ ওরফে আলমগীর ও মৌলভি মোস্তাক। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসামিদের কয়েকজন ঘটনার সঙ্গে জুনুনিসহ সাতজনের সম্পৃক্ত থাকার কথা উল্লেখ করেছিলেন।
অভিযোগপত্রের তথ্যানুযায়ী, মুহিবুল্লাহকে প্রথম গুলি করেন আরসা নেতা মাস্টার আবদুর রহিম ওরফে রকিম, এরপর আরও দুটি গুলি করেন জাহিদ হোসেন ওরফে লালু এবং আরেকটি গুলি করেন খাইরুল আমিন। চারটি গুলির পর মুহিবুল্লাহ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
অভিযোগপত্র থেকে বাদ পড়া সন্ত্রাসীদের বিচারের প্রক্রিয়া কিভাবে চলবে জানতে চাইলে আদালতের সরকারি কৌঁসুলি ফরিদুল আলম বলেন, এ ক্ষেত্রে আদালতের করার কিছু থাকবে না।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করতেন। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও তিনি প্রত্যাবাসন জোরদারের পক্ষে রোহিঙ্গাদের মুখপাত্র হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আরসাসহ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনবিরোধী সশস্ত্রগোষ্ঠী তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে।