কোষাধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে এবার শিক্ষকদের মানববন্ধন, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কোষাধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন করে শিক্ষকদের একটি পক্ষ। আজ মঙ্গলবার বেলা দুইটার দিকেছবি: প্রথম আলো

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত কোষাধ্যক্ষ কর্নেল (অব.) আবু হেনা মোস্তফা কামাল খানের অপসারণ দাবিতে এবার শিক্ষকদের একটি অংশ আন্দোলনে নেমেছে। এই দাবিতে তাঁরা আজ মঙ্গলবার দুপুরে মানববন্ধন করে অবিলম্বে তাঁর নিয়োগ বাতিল দাবি করেছেন। দাবি না মানা হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষকেরা।

এর আগে গত ২৬ নভেম্বর রাতে নতুন কোষাধ্যক্ষ তাঁর দায়িত্ব নিতে ক্যাম্পাসে এলে শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ বাধা দেয়। পরে বাধার মুখে কোষাধ্যক্ষ ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। এরপর ওই শিক্ষার্থীরা নতুন কোষাধ্যক্ষকে যোগদানে সহযোগিতা করার অভিযোগ তুলে উপাচার্য শুচিতা শরমিনের পদত্যাগের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেন। ওই সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করায় ২৭ নভেম্বর উপাচার্যের কার্যালয়ের ফটকে তালা দেন শিক্ষার্থীরা। পরে গত সোমবার রাতে উপাচার্যের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বৈঠকের পর ওই তালা খুলে দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নতুন কোষাধ্যক্ষ ২৬ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর যোগদান করেছেন। তবে এরপর আন্দোলনের কারণে তিনি অফিস করতে পারেননি।

কোষাধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে আজ বেলা দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় মানববন্ধন করে শিক্ষকদের একটি অংশ। এর আগে নবনিযুক্ত কোষাধ্যক্ষ আবু হেনা মোস্তফা কামাল খানকে ‘দুর্নীতিবাজ ও স্বৈরাচারের দোসর’ আখ্যা দিয়ে যৌথ প্রতিবাদলিপিতে স্বাক্ষর করে সংহতি প্রকাশ করেন ১৩০ শিক্ষক।

আরও পড়ুন

মানববন্ধন চলাকালে সমাবেশে কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁকে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের যায় না। তিনি একজন সামরিক আমলা। এ ছাড়া তিনি (কোষাধ্যক্ষ) দুর্নীতিগ্রস্ত ও ফ্যাসিস্টদের দোসর। আমরা কোনোভাবেই তাঁকে মেনে নিতে পারি না।’

আশরাফুল হক বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলেও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এসব বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করলেও তিনি কোনো সদুত্তর দেননি।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সিরাজিস সাদিক বলেন, ‘আমরা চাই একজন শিক্ষাবিদকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হোক। আমরা কোনোভাবেই আবু হেনা মোস্তফা কামালকে এই পদে মেনে নেব না। কারণ, তিনি শিক্ষাসংশ্লিষ্ট নন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনকালে তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। এ রকম একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে আমরা কোনোভাই এই পদে মেনে নেব না।’

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুব্রত কুমার দাস, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খোরশেদ আলম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ আশিক-ই-ইলাহী, সাদেকুর রহমান, মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের জামাল উদ্দীন, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল আলিম বাসের, সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবু জিহাদ, প্রভাষক মোস্তাকিম রহমান প্রমুখ।

আবু হেনা মোস্তফা কামাল খান তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, ‘তাঁরা যেসব অভিযোগ তুলেছেন, সেগুলো ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক।’

আরও পড়ুন