‘দুই মেয়েকে লেখাপড়া করাব কীভাবে?’

স্ত্রীর সঙ্গে গুলিতে নিহত মো. বাবু
ছবি: সংগৃহীত

‘দোকানের কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার পথে আমার স্বামীরে গুলি করে মেরে ফেলল। কারা, কেন আমার স্বামীরে গুলি করল। সে তো কোনো রাজনীতি করত না, খুবই নিরীহ স্বভাবের একজন মানুষ ছিল। আমি এখন দুই মেয়েকে লেখাপড়া করাব কীভাবে? সংসার চালাব কীভাবে?’

মঙ্গলবার সকালে কাঁদতে কাঁদতে এসব কথা বলেন মুন্নী আক্তার (২১)। তিনি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বিজয় মিছিলের দিন কুমিল্লার দাউদকান্দি মডেল থানা ঘেরাওয়ের সময় গুলিতে নিহত মো. বাবুর (২২) স্ত্রী।

বাবুর বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসদরের তুজারভাঙ্গা গ্রামে। সকালে তুজারভাঙ্গা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের সড়কগুলো সুনসান নীরব। বাবুর বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই কান্নার শব্দ কানে ভেসে এল। নিহত বাবুর বাবা, স্ত্রী ও অন্যান্য স্বজনদের কান্নার শব্দে বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে মুন্নী আক্তারের আহাজারি থামছে না। একই অবস্থা অন্য স্বজনদের।

আরও পড়ুন

কান্নাভেজা কণ্ঠে মুন্নী আক্তার বলেন, বসতভিটার পৌনে এক শতক জায়গা আর ছোট্ট একটি দোচালা টিনের ঘর ছাড়া তাঁর স্বামীর আর কোনো সম্পদ নেই। স্বামীর আয়ে সংসার চলত। বড় মেয়ে দিয়ার লেখাপড়ার খরচ চলত। ছোট মেয়ের দুধের খরচ চলত। এখন সবই শেষ। কীভাবে সংসার চালাবেন, বড় মেয়ের খরচ কীভাবে চালাবেন, ছোট মেয়ে মীমের (সাত মাস বয়স) দুধের খরচ কীভাবে চালাবেন, তা সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ জানেন না।

৫ আগস্ট বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয় মিছিলের পর উৎসুক জনতা দাউদকান্দি মডেল থানা ঘেরাও করে। এ সময় মডেল থানা পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। ওই সময়টায় বাবু দোকানের কাজ শেষ করে পৌরসভার প্রধান সড়ক মডেল থানার সামনে দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বাবু। পরের দিন বিকেলে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।

বাবুর শাশুড়ি শাহীনুর আক্তার বলেন, তাঁর ছেলে নেই। ছোটবেলায় মা হারানো জামাতা তাঁকে মা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তিনিও জামাতাকে ছেলে হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। শাহীনুর বলেন, ‘আমার বাবার (মেয়ের জামাতা) কি মরার বয়স হয়েছিল? আমার মেয়ের কি এ বয়সে বিধবা হওয়ার বয়স হয়েছিল? আল্লাহ আমার মেয়েকে কেন এত শাস্তি দিলেন? দুই নাতিন অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়ে এতিম হয়ে গেল। পুলিশ কেন আমার মেয়ের জামাতাকে গুলি করে মারল? কার কাছে বিচার চাইব?’