ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় উপজেলা নির্বাচন
সদরে জাল ভোট, সিল মারার অভিযোগে ৪০টি কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর ও নবীনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম ছিল। সেই তুলনায় বিজয়নগর উপজেলার ভোটারদের উপস্থিতি ভালো ছিল। সদর উপজেলায় বেশ কিছু চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়া ও ভোটারদের কাছ থেকে ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের এজেন্টদের বের করে দেওয়া, জাল ভোট দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে সদর উপজেলার ৪০টি কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এক চেয়ারম্যান প্রার্থী। তিন উপজেলায় জাল ভোট দেওয়াসহ বিভিন্ন অপরাধে ৩৩ জনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটেরা। এর মধ্যে সদর উপজেলাতেই ১৯ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে সকাল আটটা থেকে সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের চান্দিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুতিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ব্রহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজ, নিয়াজ মুহাম্মদ উচ্চবিদ্যালয়সহ অন্তত ২০টি ভোটকেন্দ্রে ঘুরে দেখা গেছে, ভোটারের উপস্থিতি তেমন নেই। সকাল নয়টা পর্যন্ত প্রথম এক ঘণ্টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজ ভোটকেন্দ্রে পড়েছে মাত্র একটি ভোট। সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেনের (আনারস প্রতীক) প্রার্থীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী মো. হেলাল উদ্দিনের এজেন্ট তেমন দেখা যায়নি।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে জেলা শহরের গভ. মডেল গার্লস হাইস্কুলের সামনে কথা হয় ৮–১০ জন তরুণ-তরুণীর সঙ্গে। তাঁদের কারও বাড়িই শহরে নয়। এখানে কেন এসেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তাঁদের মধ্যে এক তরুণ বলেন, ‘আমার বাড়ি নাসিরনগরে। কিন্তু এখানে ছয়টা ভোট দিছি। আর কী করুম!’ সঙ্গে থাকা অপর দুই তরুণ বলেন, তাঁরা অনেক ভোট দিয়েছেন।
সদর উপজেলার নির্বাচনের পরিস্থিতি নিয়ে বেলা দুইটার দিকে জেলা শহরের পুনিয়াউট এলাকার নিজের বাসভবনে ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী হেলাল উদ্দিন সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাল ভোট, কেন্দ্র দখল, এজেন্টদের বের করে দেওয়া, সিল মারাসহ নানা অভিযোগে ৪০টি ভোটকেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি জানান। হেলাল উদ্দিন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।
জানতে চাইলে হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, জেলা শহরের সাহেরা গফুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুনিয়াউট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খ্রিষ্টিয়ান মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাবেরা সোবহান সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, গভ. মডেল গার্লস হাইস্কুল, অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, কাজীপাড়া আদর্শ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হুমায়ূন কবীর পৌর বিদ্যানিকেতন, সদর উপজেলার নাটাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আনারস প্রতীকের ৫০-৬০ জন করে প্রবেশ করে সিল মেরেছেন। এসব কেন্দ্র থেকে তাঁর এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে।
হেলাল উদ্দীন আরও বলেন, ‘কাজীপাড়া আদর্শ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আমার সামনেই আমার এজেন্টদের বের করে দিয়েছে। পরে ম্যাজিস্ট্রেট এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা এসব বিষয়ের অভিযোগ গ্রহণ করেননি।’ তিনি অভিযোগ করেন, সদর উপজেলার প্রতিটি কেন্দ্রের প্রতিটি বুথে ১০ থেকে ১২ জন এজেন্ট রয়েছেন। তাঁদের প্রত্যেকের গলায় আনারস প্রতীকের ব্যাচ ঝোলানো ছিল। প্রতিটি কেন্দ্রেই তাঁরা ভোটারদের প্রভাবিত করেছেন। ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নাটাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে সিঁড়ির মধ্যে ৮ থেকে ১০ জন দাঁড়িয়ে থেকে ভোটারদের কাছ থেকে ব্যালট পেপার জোরপূর্বক নিয়ে সিল দিয়ে বাক্সে ফেলেছেন।
বিজয়নগর উপজেলার অন্তত ১৫টি কেন্দ্রে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভোটারদের মোটামুটি উপস্থিতি দেখা গেছে। পুরুষ ভোটারের তুলনায় নারী ভোটারদের উপস্থিতি বেশি ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে উপস্থিতি কমেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবীনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটারদের তেমন উপস্থিতি ছিল না। এ উপজেলার ভোটকেন্দ্রগুলোতে সকালে ভোটারদের বেশি দেখা যায়নি।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীসহ পর্যবেক্ষকেরা নির্বাচনে মাঠে ছিলেন। অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণ হয়েছে। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি। সদর উপজেলায় এজেন্টদের বের করে দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। আর আমার কাছে এই বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ দেননি।’