অজ্ঞাত কারণে কমিশন নির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করে, এটা রহস্যজনক

গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান

গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের উপনির্বাচনের দিন (বুধবার) দুপুরে পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে চারজনই ভোট বর্জন করেন। এরপর অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচন কমিশন ৪৪টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করে। পরিস্থিতি সামলাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বন্ধ ঘোষণার পর চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সার্বিক বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর গাইবান্ধা প্রতিনিধি শাহাবুল শাহীন

প্রশ্ন :

আপনি বলছেন, ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। কিন্তু সিসিটিভি ক্যামেরায় কক্ষে বহিরাগত লোকদের সবাই দেখেছেন। আপনি কি করে বলেন সুষ্ঠু হয়েছে?

মাহমুদ হাসান: একটা নির্বাচনের কেন্দ্রের প্রধান হলেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। নির্বাচন বাতিল এবং যেকোনো ক্ষমতা রাখেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। স্থগিত ঘোষণা করা ৫১টি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা লিখিত দিয়েছেন, তাঁদের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। এতেই বোঝা যায় নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। একটা কেন্দ্রে একজন বয়স্ক লোক ভোট দিতে গেছেন, তিনি তাঁর একজন সাহায্যকারী নিয়েছেন, এটা তো ভোট দখল নয়। কেন্দ্রের কেউ যদি চা খেতে চায়, বাইরে থেকে চা নিয়ে গেছে। এটা কি বহিরাগত হয়েছে? যাঁরা তদন্ত করবেন, তাঁরা তো প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইবেন।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

আপনার কর্মীরা লাঙ্গলসহ সব প্রার্থীর এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেন। আপনার মন্তব্য কী?

মাহমুদ হাসান: লাঙ্গলের এজেন্ট কেন, কোনো প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। অভিযোগটি সঠিক নয়। এটা ভিত্তিহীন। আমার কর্মী-সমর্থকেরা এটা করেননি।

প্রশ্ন :

অভিযোগ উঠেছে নৌকা প্রতীকসংবলিত টি-শার্ট পরে আপনার কর্মীরা ভোট নিয়ে নেয়। এটা কতটুকু সত্য?

মাহমুদ হাসান: আমার কোনো কর্মী-সমর্থক নৌকা প্রতীক সংবলিত টি-শার্ট পরে ভোট নিয়ে নেয়নি। এটা মিথ্যা অভিযোগ। তাঁরা (প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা) নৌকার গণজোয়ার এবং আমার বিজয় হবে জেনে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছেন। বরং নৌকা প্রার্থীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে ষড়যন্ত্র করে জাপা প্রার্থী ও তাঁর লোকজন নৌকা প্রতীকসংবলিত টি-শার্ট সরবরাহ করেছে।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

বিভিন্ন কেন্দ্রে আপনার এজেন্টরা গোপন কক্ষে ঢুকে নৌকায় ভোট দিতে ভোটারদের প্রভাবিত করেছেন বলে অভিযোগ। আপনি কী বলেন?

মাহমুদ হাসান: এই অভিযোগটি ভিত্তিহীন। কারণ, বিভিন্ন কেন্দ্রে পর্যাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মিডিয়ার কর্মীরা ছিলেন। আমার লোকজন ভোটারদের প্রভাবিত করলে সবাই দেখতেন। এমনকি ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা কিংবা কোনো প্রিসাইডিং কর্মকর্তা লিখিত অভিযোগ দেননি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও জানাননি। অভিযোগ থাকলে তাঁরা জানাতেন। কিন্তু যেহেতু তাঁরা জানাননি, তাহলে এটাই প্রমাণ করে ভোট সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে।

প্রশ্ন :

নির্বাচন কাজের জন্য আপনি বাইরে থেকে কর্মী এনেছেন, এ অভিযোগ বিষয়ে কী বলেন?

মাহমুদ হাসান: এটা তো নির্বাচনী প্রচারণা। এখানে দু-একজন জাতীয় নেতৃবৃন্দ আসতেই পারেন। বাধা তো নেই। সেটিও এসেছেন নির্বাচনের কয়েক দিন আগে। কিন্তু বহিরাগত কোথায় ছিল?

প্রশ্ন :

সিইসি উপনির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করেছে, বিষয়টি আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখছেন?

মাহমুদ হাসান: এ উপনির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে প্রায় সারা দিন ভোট দিয়েছেন। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ হয়েছে। কোনো কোনো কেন্দ্রে বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন কর্মকর্তারা কারও কাছে কেউ কোনো অভিযোগ দেননি। অথচ বাস্তবসম্মত যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়াই নির্বাচন কমিশন প্রথমে বেশ কিছু কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করে। পরে অজ্ঞাত কারণে কমিশন উপনির্বাচন বন্ধ করার ঘোষণা দেয়। এটা রহস্যজনক, যা সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এটি সাধারণ ভোটারদের হতাশ করেছে। তাঁরা এটা মেনে নিতে পারছেন না।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

যেসব কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হয়েছে, সেগুলোর ফলাফল প্রকাশে দলের লোকজন আন্দোলন করছে। আন্দোলনে কাজ না হলে পরবর্তী সময়ে কী পদক্ষেপ নেবেন?

মাহমুদ হাসান: যেসব কেন্দ্রে কমিশন ভোট গ্রহণ স্থগিত করে, সেগুলোতে পুনরায় ভোট হতে পারে। কিন্তু যেসব কেন্দ্রে ঝামেলা হয়নি, আমি সেই বাকি কেন্দ্রগুলোর ফলাফল ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। আন্দোলনের বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।

আরও পড়ুন