রাজশাহী মেডিকেলে সংঘর্ষের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেবে রাবি প্রশাসন, তদন্ত কমিটি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী কে জি এম শাহরিয়ারের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে সংঘর্ষের ঘটনায় আগামীকাল শনিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দেবে রাবি প্রশাসন।
এ ছাড়া পুরো ঘটনা তদন্তে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে ওই শিক্ষার্থী হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে কীভাবে পড়ে গেলেন, তা তদন্তে হল প্রশাসনকে তিন সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের দপ্তরের কনফারেন্স কক্ষে এক জরুরি সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার। সভা শেষে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পান্ডে।
গত বুধবার রাত আটটার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী কে জি এম শাহরিয়ার হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে যান। এরপর দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগে তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে হাসপাতালে ভাঙচুর চালান রাবির শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা রাবির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। পাঁচ সদস্যের একটি কমিটিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। পাঁচ সদস্যের অপর কমিটিতে শুধু হাসপাতালের লোকজন রয়েছেন। একই সঙ্গে রাবির তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে আসামি করে নগরের রাজপাড়া থানায় অভিযোগ দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পান্ডে বলেন, গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের ওপরতলা থেকে পড়ে আহত বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী শাহরিয়ার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। রাজশাহী মেডিকেলের স্টাফদের সঙ্গে উদ্ভূত ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েক শিক্ষার্থী গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। হাসপাতালে শাহরিয়ারের মৃত্যুর ক্ষেত্রে অবহেলাজনিত অভিযোগ, পরে হামলার ঘটনা, তাঁদের শিক্ষার্থী আহত হওয়া—এসব বিষয়ে জরুরি সভায় আলোচনা হয়েছে। সভায় এসব ঘটনাক্রমকে সামনে রেখে থানায় অভিযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামীকাল শনিবার এ বিষয়ে অভিযোগ দেওয়া হবে।
অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পান্ডে জানান, তাঁদের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, শাহরিয়ারের মৃত্যুর ক্ষেত্রে চিকিৎসায় অবহেলা আছে। পরে সেখানে হামলার ঘটনা ঘটে। পুরো বিষয়টি তদন্তে তাঁরা ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ইলিয়াছ হোসেনকে আহ্বায়ক ও প্রক্টর আসাবুল হককে সদস্যসচিব করা হয়েছে।
কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, মার্কেটিং বিভাগের সভাপতি, শহীদ হবিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ, একজন সহকারী প্রক্টর, রাবি চিকিৎসাকেন্দ্রের একজন চিকিৎসক ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ও আইন বিভাগের একজন অধ্যাপক।
অধ্যাপক প্রদীপ কুমার বলেন, শাহরিয়ার কীভাবে পড়ে গেলেন, এর পেছনে কোনো কারণ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের অভ্যন্তরীণ কমিটি গঠন করবে হল কর্তৃপক্ষ। তাঁরা আগামীকাল কমিটি গঠন করে তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।