মেয়র খায়রুজ্জামানের কাছে শাহরিয়ার আলমকে ক্ষমা চাইতে বললেন মুক্তিযোদ্ধারা

মানববন্ধন করে স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলমের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। আজ শনিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রাজশাহী নগরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্টেছবি: শফিকুল ইসলাম

দুই পক্ষের সংঘর্ষে রাজশাহীর বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল নিহতের ঘটনায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রকে ‘মদদদাতা’ আখ্যা দিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলমের দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁরা দ্রুত এমন বক্তব্যের জন্য সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে শাহরিয়ার আলমকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন।

আজ শনিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রাজশাহী নগরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন করে বীর মুক্তিযোদ্ধারা শাহরিয়ার আলমকে ক্ষমা চাইতে বলেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের রাজশাহী জেলা ও মহানগর কমান্ড, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড ও সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ ’৭১–এর উদ্যোগে এই মানববন্ধন করা হয়।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন রাজশাহী মহানগর ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) বীর মুক্তিযোদ্ধা এন্তাজুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসান খন্দকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাসার, জেলা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান প্রমুখ। মানববন্ধন সঞ্চালনা করেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ ’৭১–এর সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল।

মানববন্ধনে বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর ইসলাম বলেন, একটি মৃত্যুর ঘটনা কেন্দ্র করে একজন ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে। শাহরিয়ার আলম বক্তব্য দিয়েছেন খায়রুজ্জামান লিটনকে নিয়ে, যাঁরা বংশপরম্পরায় রাজনীতি করে আসছেন। হত্যার বিচার হবেই। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত তাঁরা চান। কিন্তু শাহরিয়ার আলম যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা প্রত্যাহার করা উচিত।

বীর মুক্তিযোদ্ধা এন্তাজুল হক বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম কী কারণে, কেন মারা গেলেন, সেটা রাজশাহীবাসী জানেন। তাঁর মৃত্যু নিয়ে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী (শাহরিয়ার আলম) তিনজনের নাম উল্লেখ করে পরিষ্কারভাবে বলেছেন, মদদদাতা ওই তিনজন। এই বক্তব্য দিয়ে তিনি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন।গতকাল রাজশাহী নগরে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন শাহরিয়ার আলমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। তাঁকে রাজশাহী শহরসহ জেলা থেকে প্রতিহত করা হবে।

আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম নিহতের ঘটনায় রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামানকে ‘মদদদাতা’ উল্লেখ করে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করার ঘোষণা দেন রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম। গত বৃহস্পতিবার নিহত আশরাফুলের জানাজার আগে তিনি এমন ঘোষণা দেন। তবে এ বিষয়ে পরে খায়রুজ্জামান পাল্টা শাহরিয়ার আলমকেই দায়ী করেছেন।

আরও পড়ুন

বাঘায় একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শাহরিয়ার আলম জাতীয় চার নেতার নাম উচ্চারণ করেছেন বলে মন্তব্য করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান। তিনি আরও বলেন, শাহরিয়ার আলমকেই এই হত্যাকাণ্ডের দায় নিতে হবে। তাঁর এলাকায় সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁরা চান, খায়রুজ্জামান লিটনের বিরুদ্ধে শাহরিয়ার আলম যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেই বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন এবং ক্ষমা চাইবেন। কিন্তু তিনি এই বক্তব্য বহাল রাখলে তাঁর বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

মানববন্ধনে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, ‘তিনি (শাহরিয়ার আলম) আওয়ামী লীগের এমন কোনো বড় নেতা হয়ে যাননি যে খায়রুজ্জামান লিটনকে ধিক্কার দিয়ে কথা বলবেন। আপনার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হোন এবং খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।’

আরও পড়ুন

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান বলেন, তাঁরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চান। খায়রুজ্জামান কখনো কোনো অপকর্মের সঙ্গে থাকেন না। এটা সারা দেশের মানুষ জানেন।

দলিল লেখক সমিতির কমিটি নিয়ে বিরোধের জেরে ২২ জুন বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ৫০ নেতা-কর্মী আহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় উপজেলা চত্বরের ভেতর থেকে বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলামকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার তিনি হাসপাতালে মারা যান। সংঘর্ষের পরের দিন দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শাহিনুর রহমান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। পরে গত বৃহস্পতিবার রাজশাহীর আদালতে আরেকটি মামলা করে অপর পক্ষ।

আরও পড়ুন