বগুড়ায় হামলার প্রতিবাদে ২২ রুটে বাস চলাচল বন্ধ, শ্রমিকদের মিছিল থেকে আড়তে আগুন

নারকেলের আড়তে আগুন নেভাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় বগুড়া শহরের রেলওয়ে স্টেশন এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

শ্রমিক নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বগুড়া থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার ২২ রুটে বাস-মিনিবাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার সকাল থেকে বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন জেলা থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে।

হঠাৎ বাস বন্ধ হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। আজ সকালে রাস্তায় বের হয়ে গন্তব্যের বাস না পেয়ে অটোরিকশা-ভ্যানে রওনা দিতে হয়েছে তাঁদের।

এর আগে গতকাল বগুড়ায় ব্যস্ত সড়কে অটোরিকশা দাঁড় করানো নিয়ে শহরের নারকেল আড়তদারদের সঙ্গে চালকদের বাগ্‌বিতণ্ডার জেরে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের দুই নেতার ওপর হামলা হয়। গতকাল ইফতারের আগে শহরের স্টেশন সড়কে মিতালী পাম্পের পাশে এ ঘটনা ঘটে।

অন্যদিকে হামলায় দুই শ্রমিক নেতা আহত হওয়ার জেরে আজ বেলা ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিল থেকে শহরের স্টেশন সড়কে বেশ কয়েকটি নারকেল আড়তে হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে আসেন। তখন বিক্ষুব্ধ মোটর শ্রমিকেরা স্টেশন সড়কে তাঁদের কার্যালয়ের সামনে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে লাঠিপেটা করে তাঁদের সরিয়ে দেন। সার্ভিসের সদস্যরা নারকেলের আড়তের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শহরের স্টেশন সড়কে নারকেলের বেশ কিছু আড়ত রয়েছে। এসব আড়তের সামনে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ অটোরিকশাস্ট্যান্ড। গতকাল আড়তের সামনে অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে রাখা নিয়ে চালকদের সঙ্গে কয়েকজন আড়তদারের বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে হাতাহাতি হলে সেখানে বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ও সদস্য হযরত আলী উপস্থিত হন। তাঁরা দুজন অটোরিকশাচালকদের পক্ষ নেন। এ সময় আড়তদারদের হামলায় ওই দুই নেতাও আহত হন। তাঁদের বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করেন, ‘অটোরিকশাচালকদের মারধরের খবর পেয়ে সেখানে গেলে নারকেল ব্যবসায়ী ও তাঁদের সঙ্গে থাকা লোকজন বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে হামলা করেন। তাঁরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করেন।’

বগুড়া বাস–মিনিবাস–কোচ পরিবহন মালিক সমিতির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, বগুড়া-জয়পুরহাট, বগুড়া-নওগাঁ, বগুড়া-দিনাজপুর, বগুড়া-রংপুর, বগুড়া-কুড়িগ্রাম, বগুড়া-লালমনিরহাট, বগুড়া-ঠাকুরগাঁও, বগুড়া-গাইবান্ধা, বগুড়া-ময়মনসিংহ, বগুড়া-পাবনা, বগুড়া-নগরবাড়ী, বগুড়া-সিরাজগঞ্জ, বগুড়া-বরিশাল, বগুড়া-কুষ্টিয়া, বগুড়া-খুলনা, বগুড়া-নাটোর, বগুড়া-রাজশাহী ছাড়াও অভ্যন্তরীণ কয়েকটি রুটে প্রতিদিন গড়ে ছয় শতাধিক বাস, মিনিবাস ও দূরপাল্লার কোচ চলাচল করে। আজ সকাল থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দীন বলেন, মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের দুই নেতার ওপর হামলার প্রতিবাদে জেলায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মিছিল থেকে নারকেলের আড়তে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের নিয়ে প্রশাসনের বৈঠক চলছে। বৈঠক শেষে বাস চলাচল শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।