২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

স্বামীর ‘ডামি’ স্ত্রী, মায়ের ‘ডামি’ মেয়ে

শিবচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী (ওপরে) সেলিম মিয়া ও তাঁর স্ত্রী ফাহিমা আক্তার এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী (নিচে) আয়শা সিদ্দিকা ও তাঁর মেয়ে শিফাতুন হক
ছবি: সংগৃহীত

মাদারীপুরে প্রথম ধাপে সদর, রাজৈর ও শিবচর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামী ৮ মে। সদর ও রাজৈর উপজেলায় একাধিক প্রার্থী থাকায় নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। একাধিক প্রার্থী থাকলেও ব্যতিক্রম চিত্র শিবচরে। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কেউ সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী, কেউ আবার মা-মেয়ে। দুই ব্যবসায়িক অংশীদারও একই পদে প্রার্থী হয়েছেন।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিবচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম মিয়া। এই পদে তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা পরিষদের বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাহিমা আক্তার। ফাহিমা উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক। এই দুজন সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী।

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আয়শা সিদ্দিকা। এই পদে প্রার্থী হতে তিনি জেলা পরিষদের সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। আয়শার স্বামী এ কে এম নাসিরুল হক শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। আয়শা সিদ্দিকার বিপরীতে একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাঁর বড় মেয়ে শিফাতুন হক (অহনা)। ভাইস চেয়ারম্যান পদে আবারও প্রার্থী হয়েছেন বি এম আতাউর রহমান (আতাহার)। তিনি কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাপতি। তাঁর বিপরীতে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান। তাঁরা দুজন ব্যবসায়িক অংশীদার।

শিবচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বি এম আতাউর রহমান ও মো. মনিরুজ্জামান
ছবি: সংগৃহীত

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহজাহান মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মূল তিন প্রার্থী ছাড়া আর কেউ নির্বাচন করবেন না। তাই ওই তিন প্রার্থী নিজের লোকদের ডামি প্রার্থী করেছেন। নির্বাচন হচ্ছে, এটাই কথা। ডামি প্রার্থী দিয়ে নির্বাচন হচ্ছে, এটা ছাড়া আর কিছু নয়। আর এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত। এখানে অন্য কোনো বিষয় নেই।’

সাধারণ ভোটার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, জেলার রাজনীতি থেকে শিবচর উপজেলার রাজনীতি ভিন্ন। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর–ই–আলম চৌধুরীর একক আধিপত্য থাকায় তাঁর সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো প্রার্থী নেই এখানে। শিবচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিন প্রার্থীই স্থানীয় সংসদ সদস্যের ঠিক করা। তাঁর সিদ্ধান্তের বাইরে অন্য কেউ প্রার্থী হচ্ছেন না।

শিবচর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ মোল্লা। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। এবার নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে আবদুল লতিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবারও প্রার্থী হতে চেয়েছিলাম। জনগণ ও দলের সমর্থনও ছিল। কিন্তু শিবচর তো অন্য সবকিছু থেকে ব্যতিক্রম। তাই ইচ্ছা থাকলেও প্রার্থী হইনি।’

স্বামী-স্ত্রী একই পদে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে মো. সেলিম মিয়া প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার স্ত্রী ১৫ বছর ধরে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি চেয়ারম্যান পদে লড়বেন, এমনটা তো তাঁর আগেই ইচ্ছা ছিল। তারপরে আইনি জটিলতায় মনোনয়নপত্র অনেক সময় বাদ পড়ে। সেই শঙ্কা থেকেও দুজনে প্রার্থী হয়েছি। যদি আমি বাদ পড়তাম, তাহলে আমার স্ত্রী একক প্রার্থী থাকতেন। যেহেতু দুজনের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে, তাই এখন পর্যন্ত আমাদের দুজনের সিদ্ধান্ত নির্বাচন করার। সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত এখনো আমরা কেউ নিইনি।’

নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র বাছাই ১৭ এপ্রিল শেষ হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের সময় ছিল ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল। আর ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৮ মে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, শিবচরে নির্বাচন কোনো নির্বাচন নয়। এটা শুধু লোক দেখানোর একটি নির্বাচনমাত্র। যাঁরা ডামি প্রার্থী, তাঁরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন না। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হলে সেটা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। তাই মূল প্রার্থীর সঙ্গে ডামি প্রার্থীরাও থাকবেন।

এ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিবচরে আওয়ামী লীগ অত্যন্ত শক্তিশালী ও সুসংগঠিত। ওখানে বিরোধী দল নেই বললেই চলে। যারা আছে, তাদের মধ্যে নির্বাচন করার মতো কোনো ভালো প্রার্থী বা নেতাও নেই। এ কারণে বলা যায়, আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থীর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। যদি কোনো কারণে মূল প্রার্থীর মনোনয়নপত্রে সমস্যা হয়, তাই ডামি প্রার্থী দিয়ে রেখেছি।’