আওয়ামী লীগ নেতা তুলে নেন কলেজছাত্রকে, বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন
রাজশাহীতে এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে পরীক্ষার্থীকে তুলে এনে জোর করে এক তরুণীর সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত পুলিশের হস্তক্ষেপে ওই নেতার হাত থেকে ছাড়া পেয়ে ছাত্রটি পরীক্ষা দিতে পেরেছেন। গতকাল সোমবার রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী পৌর এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
পরীক্ষার্থীকে তুলে আনা ওই নেতার নাম আবু সামা। তিনি পবা উপজেলার কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি। অভিযোগ আছে, আবু সামা তাঁর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ওই পরীক্ষার্থীকে আটকে রেখেছিলেন। এ ঘটনায় পরীক্ষার্থীর বাবা গতকাল সন্ধ্যায় চারঘাট থানায় মামলা করার জন্য যান। তবে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামলা নেননি।
ভুক্তভোগী কলেজছাত্রের নাম তাইজুল ইসলাম (২১)। তিনি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর গ্রামের আবদুল হালিমের ছেলে। তাইজুল রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্র। তাঁর প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষা চলছে। আবু সামা কার্যালয়ে আটকে রাখায় গতকাল তাঁকে আধা ঘণ্টা দেরিতে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করতে হয়েছে।
তাইজুলের বাবা আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দুপুরে পরীক্ষা দিতে অটোরিকশায় চড়ে কলেজে যাচ্ছিলেন তাইজুল। কাটাখালী বাজারে আবু সামা তাঁর লোকজন দিয়ে তাইজুলকে অটোরিকশা থেকে জোর করে নামিয়ে তাঁর কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে আটকে রাখা হয়। আবু সামা ওই সময় তাইজুলকে বলেন, এক মেয়ের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক আছে। মেয়েটিকে এখনই বিয়ে করতে হবে। তা না হলে তাঁকে ছাড়া হবে না। ছেলেকে উদ্ধার করতে গেলে তাঁকেও আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ আবদুল হালিমের।
আবদুল হালিমের দাবি, ওই মেয়ে চারঘাটের একটি কলেজে পড়ে। দুই বছর থেকে তাঁর সঙ্গে তাইজুলের কোনো যোগাযোগ নেই। এখন ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করতেই তাঁর ছেলেকে আটক করা হয়েছিল। পরে এক পুলিশ কর্মকর্তার ফোন পেয়ে তাঁকে ছেড়ে দেন আবু সামা। তাইজুলকে মারধর করা হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, ‘মেয়ের পরিবার আবু সামাকে টাকা সেধেছে। মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিতে পারলে তাঁরা তাঁকে প্রয়োজনে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই টাকার জন্যই আবু সামা তাঁর ছেলের পরীক্ষা ভন্ডুল করে বিয়ে দেওয়ার জন্য ফাঁদ পেতেছিলেন।’
রাজশাহী নগরের মতিহার জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) একরামুল হক বলেন, যখন খবর পান, তখন তিনি ও মতিহার জোনের উপকমিশনার টহলে ছিলেন। সেখান থেকে তিনি ফোন করে ওই ছেলেকে ছেড়ে দিতে বলেন। কারও সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক থাকতেই পারে, কিন্তু এ জন্য কেউ তুলে নিয়ে যেতে পারেন না। জোর করে বিয়ে দেওয়া যায় না। তিনি ছেলেকে ছেড়ে দিতে বলেছেন। ছেড়ে দিয়েছেন। টাকা চাওয়ার কোনো ঘটনা ছিল কি না, তিনি জানেন না।
অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আবু সামা প্রথম আলোকে বলেন, ছেলে ও মেয়ের মধ্যে দুই বছরের প্রেমের সম্পর্ক আছে। তাই মেয়ের বাবা তাঁকে ধরেছিলেন। তিনি সে জন্য তাঁর কার্যালয়ে বসেছিলেন। এর মধ্যে মতিহার জোনের এডিসি ফোন করে তরুণের পরীক্ষার কথা জানিয়ে ছেড়ে দিতে বলেন। তাই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর বেশি আর কিছু ঘটেনি। তিনি ওই তরুণকে মারধরের কথা অস্বীকার করেন।